অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা কার্যকর, রপ্তানিতে থাকছে শুল্ক ছাড়

প্রতীকী ছবি

মদপানের অনুমতি আছে এমন ব্যক্তিরা এখন থেকে হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং দুই তারকা হোটেল থেকে শুরু করে ক্লাব, পর্যটকেন্দ্র, অ্যামিউজমেন্ট পার্কে মদ কিনে পান করতে পারবেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় এ কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মানজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন–২০১৮ এ অ্যালকোহল বিধিমালা প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বারের মালিকসহ বিভিন্ন পক্ষের প্রায় পাঁচ বছরের চেষ্টায় বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এতদিন অ্যালকোহল কেনাবেচা, উৎপাদন, বিপণন, আমদানি-রপ্তানিতে ১৯১৫ ও ১৯১৮ সালের দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট ডিপার্টমেন্টের জন্য নির্বাহী নির্দেশনা, প্রহিবিশন রুলস ১৯৫০ এবং বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত নোটিফিকেশন অনুসরণ করা হচ্ছিল।

নতুন বিধিমালায় আগের মতোই মুসলিমদের জন্য মদপানের সুযোগ নিয়ন্ত্রিতই থাকছে। শুধু চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে তাঁরা মদ পান করতে পারবেন। তাছাড়া শুক্রবার, মহররম, শব–ই–বরাত, ঈদ–উল–ফিতর, ঈদ–উল–আজহা ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে কেনাবেচা বন্ধ থাকবে। মদের দোকান বন্ধ হবে রাত সাড়ে ১০টায়, তবে বিশেষ বিশেষ দিনে সরকারি অনুমতি সাপেক্ষ রাত দেড়টা পর্যন্ত কেনাবেচা চলতে পারে।

সাধারণভাবে মদপানের জন্য বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। একজন একবারে সর্বোচ্চ তিন ইউনিট এবং মাসে সর্বোচ্চ সাত ইউনিটের বেশি মদ কিনতে পারবেন না।

অর্থাৎ, ওয়াইনের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি ১৫ লিটার ৭৫৯ মিলিলিটার, লিকারের ক্ষেত্রে ৫ লিটার ২৫০ মিলিলিটার এবং বিয়ারের ক্ষেত্রে ৩৩ লিটার ৭৫০ মিলিলিটার পর্যন্ত কিনতে পারবেন। ওয়াইন, লিকার ও বিয়ারে অ্যালকোহলের মাত্রায় তারতম্য থাকায় এভাবে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে বিধিমালা তৈরিতে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন। যুক্তিসঙ্গত কারণে অনুমতিপ্রাপ্তরা যদি নিজে গিয়ে মদ কিনতে না পারেন তাহলে তাঁর পারমিট দিয়ে অন্য কেউ নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ কিনতে পারবেন।

বিধিমালা অনুযায়ী মদ বিক্রি হবে হোটেল, যে জায়গায় সাধারণ খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি অ্যালকোহল সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয়ে থাকে এমন রেস্তোরাঁ, মদ পানের অনুমতিপ্রাপ্তের সংখ্যা দুশো এমন ক্লাব, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, থিমপার্ক বা বিদেশি নাগরিক রয়েছেন বা থাকেন এমন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, রিসোর্ট ও শুল্কমুক্ত দোকানে।

বলা হয়েছে, দুই তারকা হোটেলে একটি, তিন তারকায় দুটি, চার তারকায় তিনটি ও পাঁচ তারকা হোটেলে সাতটি পর্যন্ত বারের অনুমোদন দেওয়া যাবে। সাতটির বেশি বারের প্রয়োজন হলে যৌক্তিকতা সাপেক্ষে বারের সংখ্যা বাড়ানো যাবে। পর্যটন, কূটনৈতিক বা অভিজাত এলাকার রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ ও ক্লাবে একটি করে বার করা যাবে। তাছাড়া বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দরে ক্ষেত্রমতে আগমন বা বহিগর্মন বা ট্রানজিট লাউঞ্জের ডিউটি ফ্রি শপে আলাদাভাবে অনুমোদন পেতে পারে একটি বার।

বিধিমালায় চা বাগানসহ যেসব সম্প্রদায়ের দেশি মদ পানের অনুমোদন আছে তাঁদের মদ কেনা, উৎপাদন ও বিপণনের বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। মদ পরিবহন সম্পর্কে বিধিমালায় বলা হয়েছে, কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথে কিংবা পোস্ট অফিস বা কোনো পরিবহন সংস্থার মাধ্যমে অ্যালকোহল পরিবহন করা যাবে।

এ ছাড়া প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে মদ উৎপাদন ও রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে। বিধিমালা প্রণয়নে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, এতদিন পর্যন্ত শুধু রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোং মদ উৎপাদন করতে পারত। আইনগত কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে অন্যান্য চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পারছিল না। বিধিমালায় এমন সুযোগ রাখা হয়েছে, যেন অন্যান্য চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মদ উৎপাদন করে রপ্তানি করতে পারে। এমনকি এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগেরও ব্যবস্থা থাকছে। উৎপাদিত মদ বিদেশে রপ্তানিতে উৎপাদনকারীরা শুল্ক ছাড়ও পাবেন।

বিধিমালায় বলা হচ্ছে, মহাপরিচালকের অনুমোদন নিয়ে নির্দিষ্ট সুরাশক্তিতে বিলাতি মদ উৎপাদন করা যাবে। এর আকার, আকৃতি, ধারণক্ষমতা, রং, গন্ধ, প্রতি বোতলে পরিমাণ, বোতলের ছিপি, বোতলের মোড়ক, রং ইত্যাদি তিনি অনুমোদন করবেন।