অ্যাম্বুলেন্স এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তাঁরা
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একদিক থেকে অন্যদিকে ছোটাছুটি করছেন অন্তত ২০ জন। অ্যাম্বুলেন্সে কোনো আহত ব্যক্তি বা কারও মরদেহ এলেই তাঁরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ স্বজন ও সহকর্মীদের খুঁজছেন তাঁরা।
অপেক্ষমাণ মানুষদের একজন মো. মিজানুর রহমান। স্বজন মো. তৌফায়েল আহমদকে খুঁজছেন তিনি। প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের পাঁচ মিনিট আগে ফেসবুক লাইভে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির এস্কেলেটর অপারেটর তৌফায়েল। লাইভ শেষ হওয়ার আগেই বিকট শব্দ হয়। তাঁর লাইভে অন্ধকার নেমে আসে। এর পর থেকে তৌফায়েলকে খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ
হতাহত ব্যক্তি উদ্ধার হলেই সাইরেন বাজিয়ে চলে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ নিহত ১৯
রাতভর বোনজামাইকে খুঁজেছেন মোহাম্মদ আলী
তৌফায়েলের বাড়ি বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া গ্রামে। দুই বছর আগে তিনি ওই কনটেইনার ডিপোতে কাজ নেন। মিজানুর বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে দেখে তাঁরা রাতেই ফোন করেন তৌফায়েলকে। কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর নগরের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও তৌফায়েলের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুরো হাসপাতাল তাঁরা তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন।
ডিপোর আইসিটি দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক আবদুস সোবাহানকে বিস্ফোরণের পর থেকেই খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁর স্বজনেরা। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, লাশঘর ও নগরের আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে অনেকটাই ক্লান্ত আবদুস সোবাহানের চাচাতো ভাই রায়হান উদ্দিন। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগেও তাঁর ভাই আবদুল সোবাহান ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। ২০১৩ সাল থেকে তিনি ডিপোতে কর্মরত আছেন। গতকাল অফিস শেষ করে ডিপোর কোয়ার্টারে চলে যান। কিন্তু আগুন লাগার কথা শুনে আবার ডিপোতে যান। সাড়ে ১১টার পর থেকে তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
সৈয়দ হোসাইন নামের এক ব্যক্তি তাঁর এক স্বজন ও ছয় সাবেক সহকর্মীর খোঁজে গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে হাসপাতালে আছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বজন নুরুল কাদের ও সাবেক সহকর্মী আবদুর রহমান, মো. রুবেল, মো. হাসিব, মো. রিদোয়ান, মো. শোয়াইব, মো. রবিউলকে বিস্ফোরণের পর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের সবার মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। তাঁদের সবার বাড়ি বাঁশখালী।
ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আজ রোববার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মীও রয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছেন। ঘটনার পরপরই হতাহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।