অস্তিত্বহীন ধারায় মামলা, প্রার্থী কারাগারে

>

• এজাহারে নাম না থাকলেও অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকনের নাম আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়।
• তিনজন একসঙ্গে জামিন নিতে গেলে আদালত দুজনের জামিন মঞ্জুর করেন
• খায়রুল কবিরকে কারাগারে পাঠানো হয়

মামলাটি হয়েছিল বিশেষ ক্ষমতা আইনের অস্তিত্বহীন একটি ধারায়। সেই ধারায় অভিযোগপত্রও জমা দেয় পুলিশ। পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে নতুন ধারায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকনের নাম আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়। সেই মামলায় তিনজন একসঙ্গে জামিন নিতে গেলে আদালত দুজনের জামিন মঞ্জুর করেন। খায়রুল কবিরকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি নরসিংদী–১ (সদর) আসনে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী।

খায়রুল কবির
খায়রুল কবির



পরিবার ও আইনজীবীর অভিযোগ, তাঁকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করা হচ্ছে। পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ২৭ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ। এজাহারে খায়রুলের নাম ছিল না। ২৫ নভেম্বর এ মামলায় ২৭৩ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেই অভিযোগপত্রের ৮৭ নম্বর আসামি তিনি। এরপর ২৯ নভেম্বর বিকেলে খায়রুল এবং জেলা যুবদলের সভাপতি মোহসীন হোসাইন ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির এ মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। আদালত দুজনের জামিন মঞ্জুর করলেও খায়রুলকে কারাগারে পাঠান।

খায়রুল কবিরের স্ত্রী শিরিন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ (২) ধারায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অথচ ধারাটি অনেক আগেই বাতিল হয়েছে। উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য অভিযোগপত্রের নকল তুলতে গিয়ে ভুলটি ধরা পড়ে। পরে গত শনিবার পুলিশ নিজের ভুল বুঝতে পেরে নতুন ধারায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়। তিনি বলেন, ‘৭২০ পাতার অভিযোগপত্রের নকল তুলতেই লেগে গেল পাঁচ দিন। কম সময়ে পাওয়া গেলে আরও আগেই হাইকোর্টে যেতে পারতাম। নির্বাচনের মাঠে না থেকে আমাদের আদালতে দৌড়াতে হচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ / ২ ধারাটি বাতিল হয়েছে ২৭ বছর আগে, ১৯৯১ সালে। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। এরপর ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে ‘ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক’ কাজ থেকে বিরত রাখতে এক অধ্যাদেশের বলে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ ধারাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে ধারাটি আর অনুমোদন পায়নি। ফলে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬,১৭ ও ১৮ ধারা বাতিল অবস্থায় থেকে যায়। এরপরও ওই আইনের অপব্যবহার হচ্ছিল। সর্বশেষ এ বছরের ২৩ জুলাই এক আদেশে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিশেষ ক্ষমতা আইনের অস্তিত্বহীন ধারায় মামলা না করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন।

নরসিংদী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফজলুল হক বলেন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়ার বিধান আইনে আছে। তবে বিষয়টি আইনসংগত কি না, সেটা খুবই জটিল প্রশ্ন। এর উত্তর দেওয়া কঠিন।