অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

গত বছরের ডিসেম্বরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের
ফাইল ছবি

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহত হওয়ার ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

গত ২৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহা. আমিনুর রহমান দপ্তরপ্রধানদের এ নির্দেশনা দেন।

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহত হওয়ার ঘটনায় গত ৩ জানুয়ারি রাতে লঞ্চটির চার মালিক, মাস্টার ও চালকদের দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

সদরঘাটে কর্মরত নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি সদরঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ চার জাহাজ জরিপকারকের দপ্তর পরিবর্তনের নির্দেশ দেয় নৌপরিবহন অধিদপ্তর।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিনকে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশে বলা হয়েছে, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪৭ জন যাত্রী মারা যান। ৭২ জন যাত্রী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। বহু (কথিতমতে প্রায় ৩০ জন) যাত্রী নিখোঁজ হন। এ দুর্ঘটনা তদন্তের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে দুর্ঘটনার জন্য নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারক ও প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রশিদ এবং পরিদর্শক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করে।

নির্দেশে আরও বলা হয়, মাহবুবুর ও হাবিবুরের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। বিভাগীয় মামলা চলাকালে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা যেন অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সে জন্য সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেককে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সংস্থার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এই দুই কর্মকর্তার নাম জানা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে বিআইডব্লিউটিএর প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ আবু জাফর হাওলাদারের মুঠোফোনে কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সদরঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নুল আবেদিনের অবহেলার বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল। এ ছাড়া কমিটি অভিযান-১০ লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে যাওয়ার সময় দায়িত্ব পালনকারী বিআইডব্লিউটিএর দুজন পরিবহন পরিদর্শকের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল।

মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় তিন মাস বসে থাকার পর লঞ্চটি আবার চালু হয়। এ সময় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারক ও পরিদর্শক এবং বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শকদের কেউই ভালোভাবে লঞ্চটি পরীক্ষা করেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মাহবুবুর রশিদ লঞ্চটির ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে খোঁজ রাখেননি। তিনি লঞ্চটি পরিদর্শন করে চলাচলের জন্য অনুমতি দিতে সুপারিশ করেছিলেন। জাহাজ জরিপকারক তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন।

মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, লঞ্চটি প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা-বরগুনা রুটে গত ১৯ ডিসেম্বর প্রথম যাত্রা করে। ২৩ ডিসেম্বর করে দ্বিতীয় যাত্রা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সদরঘাটে নিয়োজিত নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯ ও ২৩ ডিসেম্বর লঞ্চটি পরিদর্শন করেননি। সদরঘাটে কর্মস্থল হওয়া সত্ত্বেও হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর লঞ্চটি পুনরায় চালু হওয়ার সময় পরিদর্শন বা কোনো অনুসন্ধান না করে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে চরম অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন।

লঞ্চটির যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর পর পুনরায় সার্ভিসে আসার বিষয়টি অবগত হওয়া সত্ত্বেও বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নুল আবেদিন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারককে বিষয়টি না জানিয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিআইডব্লিউটিএর যে পরিবহন পরিদর্শক অভিযান-১০ লঞ্চকে ‘ত্রুটি নেই’ বলে যাত্রা শুরুর অনুমতি দিয়েছিলেন, তদন্তে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর দায় আছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করেনি কমিটি।