অবৈধভাবে চলছে চ্যানেল সিক্সটিন
বিদেশি চ্যানেল ডাউনলিংকের মাধ্যমে প্রচারের নামে অবৈধভাবে সম্প্রচার চালাচ্ছে চ্যানেল সিক্সটিন (চ্যানেল-১৬) নামের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এই চ্যানেলটি নানা বিজ্ঞাপন ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
এ-সংক্রান্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের নথিতে দেখা যায়, চ্যানেল-১৬-কে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের জন্য যে ডাউনলিংক অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে গত বছরের ৩০ নভেম্বর। চ্যানেলটির পরিচালকদের একাংশও অবৈধ সম্প্রচারের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ও চ্যানেলটির বন্ধের সুপারিশ করেছে।
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এ দেশে সম্প্রচারের কার্যক্রমকে ডাউনলিংক বলা হয়ে থাকে। ২০০৮ সালে ইনসাইট টেলিকাস্টের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কে জি মুহিত একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল ডাউনলিংকে চালানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে গ্লোবাল কাস্ট এশিয়া পিটিই লিমিটেডের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেল-১৬ এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলক ডাউনলিংকের মাধ্যমে সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়। শর্তে বলা হয়, সেটি কেবল ডাউনলিংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান প্রচার করবে। আপলিংকের (দেশ থেকে পরিচালিত) মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারবে না। চ্যানেলটি পরবর্তী সময়ে বিদেশে টাকা পাঠানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করবে না এবং স্যাটেলাইট টিভিবিষয়ক যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারবে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চ্যানেল-১৬ ঢাকা থেকে পরিচালিত হয়। এতে প্রচারিত অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনও এ দেশে তৈরি। ইসরায়েলভিত্তিক একটি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সম্প্রচার করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রায় স্যাটেলাইট ভাড়া পরিশোধ করার কোনো অনুমতি নেই চ্যানেলটির।
তাহলে কীভাবে ভাড়া পরিশোধ করা হয়—এ নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে জি মুহিত। তথ্য মন্ত্রণালয় চ্যানেল-১৬-এর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। তাতে বলা হয়, চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহিত প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা বারবার পরিবর্তন করেছেন। কখনো ঢাকার মধুবাগ, কারওয়ান বাজার, কখনো শাজহাদপুর দেখিয়েছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দুজনের ও চেয়ারম্যান হিসেবে দুজনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কে জি মুহিত ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক হাসিনা দৌলার নাম ব্যবহার করে এবং সই জাল করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। পরে হাসিনা দৌলা এক চিঠিতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানান, তিনি এই চ্যানেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। নানা অস্বচ্ছতার কারণে চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করার সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা বন্ধ হয়নি।
অবশ্য কে জি মুহিত দাবি করেন, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তিনি টেলিভিশনের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সবই বৈধ, কারও অনুমতি লাগে না।
এ ছাড়া চ্যানেলটি সারা দেশে সংবাদদাতা নিয়োগ দেওয়ার নামে অর্থ আদায় ও প্রতারণা করেছে বলেও অভিযোগ পেয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। মুহিত প্রথম আলোর কাছে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
একইভাবে চ্যানেল ফাইভ নামের আরেকটি চ্যানেলও প্রতিনিধি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চ্যানেল ফাইভ নামে এ দেশে কোনো টেলিভিশন চ্যানেল নেই। এ নামে কেউ আবেদনও করেনি। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রথম আলোকে বলেন, চ্যানেল-১৬-এর বিষয়ে প্রাপ্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ রকম আর কোনো অবৈধ চ্যানেল থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।