২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

অন্তত ৩৬ উপজেলায় গরিবের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

সামান্য বৃষ্টির পানিতে ভেঙে পড়েছে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে দেওয়া ঘর। বড় রায়পাড়া গ্রাম, গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ
প্রথম আলো

ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমিসহ ঘর করে দেওয়ার জন্য নেওয়া সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেশের ২২ জেলার অন্তত ৩৬টি উপজেলায় বেশ কিছুসংখ্যক ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোথাও ঘর নির্মাণের পর পর তা ভেঙে যাচ্ছে। কোথাও দেখা দিয়েছে ফাটল। কোথাও আবার নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ, ভিত নড়বড় হয়ে যাওয়া এবং ঘর দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ আছে।

প্রকল্প সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এসব অনিয়মের অভিযোগে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রশাসন ক্যাডারের পাঁচজন কর্মকর্তাকে শাস্তির জন্য বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ হলে আরও কিছু কর্মকর্তাসহ অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ভেঙে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ঘরগুলো মেরামত ও প্রয়োজনে পুননির্মাণ করে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া আগামীকাল শুক্রবার প্রকল্পের অধীন পাঁচটি দল (টিম) অভিযুক্ত এলাকায় সরেজমিনে যাচ্ছেন। এর ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের সমন্বয়ে সারা দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন একেকটি পরিবারকে দুই শতাংশ জমির ওপর আধা পাকা ঘর দিচ্ছে সরকার। ইউএনওদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে এই কাজটি হচ্ছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি), এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (সদস্যসচিব)। মুজিব বর্ষকে ঘিরে ইতিমধ্যে সোয়া লাখের বেশি ভূমিহীনকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় ঘর নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ার এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। প্রথমত সারা দেশের নবীন কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন, এ জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু কিছু জায়গায় যেসব অনিয়মের অভিযোগ গণমাধ্যমের মাধ্যমে নজরে এসেছে সে বিষয়ে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৩৬টি উপজেলায় বিভিন্ন ঘর নির্মাণকাজে অনিয়ম হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে নির্মাণের পর পর ঘর ভেঙে যাওয়া, ভিত নড়বড় ও নির্মাণসামগ্রী নিম্ন মানের হওয়া, ঘর দেওয়ায় টাকা নেওয়ার মতো অভিযোগগুলো রয়েছে। সেগুলো তালিকা করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতে এখন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, এই অভিযোগে ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে সাবেক ইউএনও (বর্তমানে উপসচিব) মো. শফিকুল ইসলাম, বরগুনার আমতলীর ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান, বগুড়ার শেরপুরের সাবেক ইউএনও মো. লিয়াকত আলী সেখ (বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক), মুন্সিগঞ্জ সদরের সাবেক ইউএনও রুবায়েত হায়াত শিপুল ( হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পদ থেকে রাজউকের উপপরিচালক হিসেবে বদলির আদেশাধীন) এবং মুন্সিগঞ্জ সদরের বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন। বিভাগীয় মামলার ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তি ঠিক হবে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের সাবেক ইউএনও শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।বাকিদের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন আছে।