অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্যই সংলাপ: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার অপমান করা সত্ত্বেও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে অবাধ ও সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে জন্য তিনি সংলাপে বসেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই রকম অপমান তারা করেছে, হয়তো আমরা ভুলতে পারব না। তার পরও, আগামীতে সকলের অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা দায়িত্ব মনে করে আমরা সংলাপে গিয়েছি।’
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই সকলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এ দেশের মানুষকে যাতে ওই জ্বালাও-পোড়াও—এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়। এত অপমান এত কিছু সব সহ্য করেও আমরা শুধু দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক, দেশের মানুষ তাঁর ভোটটা শান্তিতে দিতে পারুক, দেশের মানুষ তাঁর মনমতো সরকার বেছে নিক—সেই চিন্তাটা করেই আমরা এই সংলাপে বসেছি।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সময়ে দেশের নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আছি, কাজেই আগামীর নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, আমরা সরকারে আসার পরে এই পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি নির্বাচন হয়েছে, এর মধ্যে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের প্রায় ১৫ জন সংসদ সদস্য মারা যাওয়ায় সেসব আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। কিন্তু সেসব নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসময় আমরা পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরেছি। সিলেটে হেরেছি, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশন ২৫৪টি ভোটকেন্দ্রের ভোটের পুনঃতদন্ত করে প্রায় দেড় মাস পর ফল ঘোষণা করেছে, সেখানে আমরা কোনো রকম হস্তক্ষেপ করিনি। কারণ, জনগণ ভোটের মালিক, জনগণ ভোট দেবে এবং স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।’
এই নির্বাচন কমিশনকে সব দলের প্রতিনিধি নিয়ে এমনকি বিএনপিরও প্রতিনিধি নিয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে, উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কাজেই এই নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে কোনো অভিযোগ থাকার সুযোগ আছে বলে মনে করি না এবং এই সার্চ কমিটি দ্বারা গঠিত নির্বাচন কমিশন প্রতিটি নির্বাচন করেছে স্বচ্ছতার সাথে এবং তারা যা ফলাফল দিয়েছে, আমরা সেটাই মেনে নিয়েছি।’
তাঁর সরকারের জায়গায় যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকত, তাহলে দেশে এত সুষ্ঠুভাবে কি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারত, তারা কি পরাজয়গুলো মেনে নিত? প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সিলেট ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে হারার পরও আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ, এত উন্নয়নকাজ করেছি তারপরও যদি জনগণ ভোট না দেয়, আমাদের করার কিছু নেই, এটা জনগণের বিচার। তারা যেটা বিচার করবে, সেটাই হবে।’
দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি স্মরণসভায় বক্তব্য দেন।
১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির পিতার ঘাতকেরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী এবং মুজিবনগরের প্রবাসী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং বঙ্গবন্ধুর অপর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে নির্মমভাবে হত্যা করে।