বদলে দেবে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা
তৃতীয় টার্মিনাল যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক করার নানান বন্দোবস্তের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ও ব্যস্ততম বলা হয়। সেই চাঙ্গির নকশাকার স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশাতেই নির্মিত হয়েছে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। কর্তৃপক্ষ বলছে, আধুনিক সব সুযোগ–সুবিধাসহ দৃষ্টিনন্দন এই টার্মিনাল দেশের বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতাকেই পাল্টে দেবে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, তৃতীয় এই টার্মিনালের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজই শেষ। আগামীকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। নির্মাণকাজ শুরুর প্রায় চার বছরের মাথায় এই টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করা হবে। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী এই টার্মিনাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন।
এই টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ এতে ৫ হাজার কোটি টাকা দেবে। প্রকল্পটির বাকি তহবিল দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে প্রথমে ১৩ হাজার ৬১০ দশমিক ৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায়। টার্মিনাল নির্মাণের কাজ করছে জাপানের মিৎসুবিশি, ফুজিতা ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
দেশের প্রথম বিমানবন্দর ছিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে। স্বাধীনতার পর বিমানবন্দরটি বিমান চলাচলের সার্বিক চাহিদা পূরণ করতে পারছিল না। ১৯৮১ সালে কুর্মিটোলায় নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হয়। তখন নাম ছিল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ২০১০ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যাত্রী সেবা পাচ্ছে। সে হিসাবে, বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালটি চালু হলে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
বেবিচক বলছে, বিশ্বমানের এই টার্মিনালটিতে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এ ছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট থাকবে।
ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হলে যানজটের ভয়ে হাতে লম্বা সময় নিয়ে রওনা দিতে হয়। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, তৃতীয় টার্মিনালে যেতে সে ভোগান্তি আর পোহাতে হবে না। যানজট এড়ানোরও নানান অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। মেট্রোরেল, উড়ালসড়কের কাজও এগিয়ে চলছে। এ সব কটি পথই ঠেকবে তৃতীয় টার্মিনালে।
ইতিমধ্যে দিয়াবাড়ি থেকে মেট্রোরেল আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করছে। এ ছাড়া গত মাসে উড়ালসড়কের কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ চালু হয়েছে। এই পথটুকু পাড়ি দিতে এখন ১০ থেকে ১২ মিনিট সময় লাগছে। অর্থাৎ বিমানবন্দরকেন্দ্রিক দ্রুত চলাচলের কার্যক্রম প্রায় সবই চালু হয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা ও যাত্রীদের অভিজ্ঞতা ও দেশের চিত্র পাল্টে দেবে।
নতুন টার্মিনালের সুবিধা প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবেন। বর্তমানে টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা অনেকগুলো সনাতন পদ্ধতিতে চলে। কিন্তু নতুন জায়গায় সব হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। একজন যাত্রীর ব্যাগ যন্ত্রে পরীক্ষা হবে চারবার, এরপর তা সরাসরি চলে যাবে। কোনো ঝামেলা নেই।
তৃতীয় টার্মিনাল যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক করার নানান বন্দোবস্তের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নতুন টার্মিনাল ভবনের বহির্গমন পথে ১০টি স্বয়ংক্রিয় ই-গেট থাকবে। যেসব যাত্রী অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে আসবেন, তাঁদের জন্য পাঁচটি ই-গেট থাকবে।
পাশাপাশি থাকবে ১৭৭টি চেকইন কাউন্টার, ৬৪টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং ৬৪টি আগমনী ইমিগ্রেশন ডেস্ক। যাত্রীদের তল্লাশি ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসছে। বডি স্ক্যানার যন্ত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তল্লাশি চলবে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের বর্তমান টার্মিনাল দুটিতে হাতে গোনা কিছু লাউঞ্জ ছাড়া সময় কাটানোর তেমন ব্যবস্থা নেই। তৃতীয় টার্মিনালে সময় কাটানোর জন্য মুভি লাউঞ্জ, ফুডকোর্ট, এয়ারলাইনস লাউঞ্জ, ডে-রুম ও ১৪টি স্পটে ডিউটি ফ্রি শপ থাকবে।
যাত্রীদের নিতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, ব্রেস্টফিডিং কর্নার, বাচ্চাদের খেলার জায়গা থাকছে। নতুন টার্মিনালে যাত্রীদের ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানিয়েছে বেবিচক।