পুলিশ সাদাপোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না: উপদেষ্টা
পুলিশ সাদাপোশাকে থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন পুলিশের কাছে হয়রানির শিকার না হন, আবার দোষী ব্যক্তিরা যেন ছাড় না পান।
আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে মব জাস্টিসের (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) নামে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কেউ অপরাধী হলে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। সরকারি কর্মচারীরা রাজনীতিতে জড়াবেন না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে যে স্থবিরতা ছিল, সেটার উন্নতি হয়েছে। তবে তা জনগণের চাহিদা অনুযায়ী হচ্ছে না। সবাই মিলে চেষ্টা করলে এ থেকে উত্তরণ সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারে অভিযান চললেও এ পর্যন্ত আশানুরূপসংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
এগুলো উদ্ধারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি–সম্পর্কিত থাকায় এ কাজে গতি বৃদ্ধি করা দরকার বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের বড় ব্যাধি হলো ঘুষ। এটি বন্ধ না হলে দেশের অবস্থার পরিবর্তন হওয়া কঠিন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগ ও বদলিতে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশের অনেক মিডিয়া মিথ্যা ঘটনা তৈরি করে প্রচার করছে। আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোকে সত্য ঘটনা তুলে ধরতে হবে। তাহলেই তাদের অসত্য প্রচার সবার সামনে দৃশ্যমান হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু নেই, আমরা সবাই বাংলাদেশি। আইন সবার জন্য সমান।’
তিনি আরও বলেন, বাজারে সয়াবিন, আলু ও পেঁয়াজের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। সয়াবিন আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আলুর দাম বেশি থাকায় কৃষকের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভবান হচ্ছে।
আগামী রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, খুলনা নেভাল এরিয়া কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল গোলাম সাদেক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০৫ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজহার সিদ্দিকী, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার, ডিজিএফআইয়ের কর্নেল সৈয়দ আসাদুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো. রেজাউল হক।
সভায় অংশ নেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, খুলনা রেঞ্জ পুলিশ, রেঞ্জের সব জেলার পুলিশ ইউনিট, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ধর্মীয় নেতারা।