পাঁচ নতুন কারাগার: পড়ে আছে নতুন ভবন, পুরোনো ভবনে হাজারো কয়েদি
খুলনায় দুই হাজার বন্দী ধারণক্ষমতার নতুন একটি কারাগারের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। সেই হিসাবে এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কারাগারটি চালু হয়নি। পুরোনো কারাগারেই গাদাগাদি করে থাকছেন বন্দী ও কয়েদিরা।
নথিপত্র বলছে, খুলনা জেলা কারাগার প্রকল্পটি নেওয়ার আগে সমীক্ষা করা হয়নি। এ কারণে নির্মাণকাজ শুরুর পর ভুল হয়েছে পদে পদে; আবার তা সংশোধনও করা হয়েছে। এ অবস্থায় তিনবার সময় বাড়িয়েও সব কাজ শেষ করতে পারেনি কারা অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা কয়েকটি ভবন কয়েক বছর ধরে খালি পড়ে আছে। এতে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে ভবনগুলো। চুরি হচ্ছে ভবনের ভেতরে থাকা উপকরণ।
ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের চিত্রও একই রকম। এ প্রকল্পের শুরুতেও সমীক্ষা করা হয়নি। পরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে ভুল হয়েছে; আবার তা সংশোধন হয়েছে। নতুন এ কারাগারের ভেতর দীর্ঘদিন ধরে অন্তত ১০টি আবাসিক ভবন খালি পড়ে আছে। কেউ ব্যবহার না করায় এগুলো পরিত্যক্ত হচ্ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে জানালার গ্রিল ও কাচ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) আলাদা দুটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত মাসে প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবেদন দুটি।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন যে তড়িঘড়ি করে নতুন নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই। অথচ কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার আগে সমীক্ষা করার কাজটি বাধ্যতামূলক। প্রকল্প অনুমোদনে যতটা তৎপর ছিলেন কর্মকর্তারা, বাস্তবায়নে ততটাই নিষ্ক্রিয় থেকেছেন তাঁরা।
কারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, খুলনা, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, জামালপুর ও কুমিল্লা—এ পাঁচ জেলায় নতুন কারাগারের নির্মাণকাজ চলছে। কোনোটির কাজ চলছে ১৩ বছর ধরে, কোনোটি ৯ বছর, কোনোটি পাঁচ বছর ধরে। কিন্তু একটি প্রকল্পের কাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি অধিদপ্তর।
দেশের অনেক কারাগারই শুধু পুরোনো ও জরাজীর্ণই নয়; অরক্ষিতও। বগুড়া ও নরসিংদী জেলা কারাগার এমন কারাগারের দুই উদাহরণ। দেশের কারাগারগুলো যে কতটা অরক্ষিত, এ দুই কারাগারের সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় তা উঠে এসেছে। গত জুনে বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেমড সেল থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি ছাদ ফুটো করে পালিয়ে যান। যদিও কয়েক ঘণ্টা পরই গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁরা। জেলা–পুলিশ বলেছিল, ব্রিটিশ আমলে তৈরি ওই কক্ষের ছাদ তৈরি হয়েছিল ইট, বালু ও চুন-সুরকি দিয়ে, কোনো রড ছিল না। ফলে জরাজীর্ণ ছাদ ছিদ্র করতে সক্ষম হয়েছিলেন ওই ব্যক্তিরা।
এ ছাড়া দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। ওই দিন কারাগারে থাকা ৮২৬ বন্দী পালিয়ে যান। এ ঘটনায় দেশে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে অনেক কয়েদি ফিরে আসেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হন। এ কারাগারও অনেক পুরোনো ও জরাজীর্ণ।
সমীক্ষা ছাড়া নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্প নেওয়ার কারণে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কেন সমীক্ষা করা হয়নি, তা জানা নেই।
কারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, খুলনা, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, জামালপুর ও কুমিল্লা-এ পাঁচ জেলায় নতুন কারাগারের নির্মাণকাজ চলছে। কোনোটির কাজ চলছে ১৩ বছর ধরে, কোনোটি ৯ বছর, কোনোটি পাঁচ বছর ধরে। কিন্তু একটি প্রকল্পের কাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি অধিদপ্তর।
একদিকে প্রকল্পগুলোর সময় বেড়েছে; অন্যদিকে, একই সময় খরচ বেড়েছে। পাঁচ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ঠেকেছে ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায়। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, এ ধরনের প্রকল্প এত দীর্ঘ সময় ধরে চলা উচিত নয়। সমীক্ষা করে কারাগারের কাজ শুরু করলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
খুলনা কারাগারের নির্মাণকাজ শেষ করতে লাগল ১৩ বছর
২০১১ সালে ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ৫৪৪ জন। আছেন প্রায় ২ হাজার জন। অর্থাৎ, বন্দীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার প্রায় চার গুণ।
কারাগারটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৬ সালে। তিন দফা সময় বাড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে গত মাসে। তবে কিছু কাজ এখনো রয়ে গেছে। দীর্ঘ এই সময়ে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
আইএমইডির কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনা জেলা কারাগারে কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ৬৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের জন্য এত ছোট ফ্ল্যাট থাকার উপযোগী নয়। ফ্ল্যাটে উঠতে রাজি হচ্ছেন না কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, ফ্ল্যাট অন্তত ৮০০ বর্গফুটের হওয়া উচিত ছিল।
কারাগার নির্মাণ প্রকল্পগুলো একসময় তাড়াহুড়া করে অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন যদি সমীক্ষা করা হতো, এখন ভুল-ত্রুটি হতো না। এখন ভবন নির্মাণকাজ শেষ, কিন্তু ওঠার মতো পরিবেশ নেই। তাই সেসব ত্রুটি সংশোধন করতে হচ্ছে।
এদিকে সমীক্ষা না করায় জেলখানায় মালামাল পৌঁছানোর কোনো রাস্তা ছিল না। পরে নতুন করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
আইএমইডি বলছে, কারাগারের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ নকশা অনুযায়ী হয়নি। কারাগারের ভূমি উন্নয়নের ফলে সীমানাপ্রাচীর অনেকাংশে নিচু হয়ে গেছে। ফলে সীমানা প্রাচীর টপকে বহিরাগত লোকজন ভেতরে প্রবেশ করেন। বিভিন্ন স্থাপনার সরঞ্জাম চুরি করে নিচ্ছেন তাঁরা। এলাকাটি যথেষ্ট নিরাপত্তাঝুঁকিতেও রয়েছে।
দীর্ঘদিন খালি পড়ে থাকায় স্টাফ কোয়ার্টার, বিচারাধীন পুরুষ বন্দী ব্যারাক, দণ্ডপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দী ব্যারাক, প্রশাসনিক ও সাক্ষাৎকার ভবনের রডে মরিচা ধরেছে। প্লাস্টার নষ্ট হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় এ ধরনের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যে ধরনের লবণাক্ততারোধ ব্যবস্থা পরিকল্পনায় থাকা জরুরি ছিল, তা আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে ভবনগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলখানার ড্রেনেজ ব্যবস্থা শহরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। অতিবৃষ্টিতে জেলখানা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছে আইএমইডি।
পাঁচ বছর ধরে খালি ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের ভবন
ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদি ধারণক্ষমতা ৯৯৬ জন। বর্তমানে সেখানে গড়ে ১ হাজার ৯৩২ কয়েদি অবস্থান করছেন; যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। কারাগারটির অধিকাংশ স্থাপনা ২০০ বছর আগের। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার প্রকল্পটি ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালে পাস হয়। আগামী বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
প্রকল্পের আওতায় কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ৬০০ বর্গফুটের ৬টি ভবনের নির্মাণকাজ ২০১৯ সালে শেষ হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব ভবন খালি পড়ে আছে। ৮০০ ও ১০০০ বর্গফুটের অন্তত পাঁচটি ভবনের কাজও শেষ হয়েছে। তবে এসব ভবনেও কেউ ওঠেননি। ভবনের বাইরের প্লাস্টার নষ্ট হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন পরিত্যক্ত সব ভবন। কোনো কোনো ভবনের জানালার গ্রিল ও কাচ চুরি হয়ে গেছে।
ভবনগুলো খালি পড়ে থাকার কারণ হিসেবে জানা গেছে, ভবন নির্মাণ করার পর এগুলোর পাশের ভূমির উন্নয়ন করা হয়নি। ভবনে যাওয়ার রাস্তা নেই, নেই সীমানাপ্রাচীর। দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ। ভবনগুলো দিন দিন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে।
ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলছেন, কারাগারের আবাসিক ভবনে ওই সব অসুবিধা তো আছেই। এ ছাড়া সেখানে থাকার চেয়ে জেলা শহরে ভাড়া বাসায় থাকায় খরচ কম হয়। তাই অনেকে ভবনগুলোয় উঠতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
কারা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, ২০১৮ সালে এই কারাগারের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। চারবার সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। ১২৭ কোটি টাকার ব্যয় ঠেকে দাঁড়িয়েছে ২৪০ কোটি টাকায়। এখনো প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৪৬ শতাংশ।
পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়লেও নরসিংদী জেলা কারাগার নির্মাণে অগ্রগতি ৫০ ভাগ
কারা অধিদপ্তর সূত্র বলছে, নরসিংদী নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে আরও দুই বছর সময় বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩২৭ কোটি টাকা হলেও কাজের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫০ ভাগ।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ প্রকল্পেও সমীক্ষা করা হয়নি। সমীক্ষা করলে পরে নানা জটিলতায় পড়তে হতো না। কারাগারের ভেতর ১১ কেভির বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে, যা এখনো স্থানান্তর করা হয়নি। ফলে নির্মাণকাজে সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া, জমি অধিগ্রহণ ও সীমানা নিয়ে জটিলতার মতো সমস্যাও আছে।
আইএমইডি বলছে, সরকারের নির্দেশ আছে ২০২৫ সালের মধ্যে ইটের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনা। সব প্রকল্পে ব্লক ব্যবহার করা। তবে এ প্রকল্পে পরিবেশবান্ধব ব্লক দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনে ব্যবহৃত কিছু ইটের মানও সন্তোষজনক পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে আইএমইডির প্রতিনিধিদল দেখেছে, সাধারণত কারাগারের সীমানাপ্রাচীর তুলনামূলক উঁচু থাকে। কয়েদি বা বন্দীরা যাতে পালাতে না পারেন, সে জন্যই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে। তবে এই জেলখানার ভেতর যে উচ্চতার প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে, তা নকশা অনুযায়ী কম দেওয়া হয়েছে।
জামালপুর ও কুমিল্লা কারাগারের অবস্থাও উল্লেখ করার মতো নয়
জামালপুর জেলা কারাগারে বন্দীর ধারণক্ষমতা ৩০০। এটিকে দ্বিগুণ করতে ২০২০ সালে ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী বছর জুনে এটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১২ শতাংশ।
এ ছাড়া কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। এ প্রকল্পের ব্যয় ৬১০ কোটি টাকা। আগামী বছর জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে এ প্রকল্পের অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়।
চার প্রকল্পের পরিচালকদের ভাষ্য
খুলনা, নরসিংদী ও কুমিল্লা কারাগার প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মোকতার আহমদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সমীক্ষা ছাড়া নতুন কারাগার নির্মাণের প্রকল্প নেওয়ার কারণে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কেন সমীক্ষা করা হয়নি, তা জানা নেই। করলে ভালো হতো। তিনি বলেন, পুরো কাজ শেষ না হলে ভবনে ওঠার সুযোগ নেই। কর্মচারীদের জন্য ৬৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত সরকারের। এ বিষয়ে তাঁর কিছু করার নেই।
মোকতার আহমদ চৌধুরী আরও বলেন, কুমিল্লা কারাগারের জমি এখনো বুঝে পাননি তাঁরা। এ জন্য কাজে বিলম্ব হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে জানান তিনি।
ময়মনসিংহ ও জামালপুর কারাগারের প্রকল্প পরিচালক সুব্রত কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, কারাগার নির্মাণের প্রকল্পগুলো একসময় তাড়াহুড়া করে অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন যদি সমীক্ষা করা হতো, এখন ভুল-ত্রুটি হতো না। এখন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ, কিন্তু ওঠার মতো পরিবেশ নেই। তাই সেসব ত্রুটি সংশোধন করতে হচ্ছে।