আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে উন্নয়নের নামে সহিংসতা হয়েছে। জনগণের করের টাকায় এবং বিদেশি কোম্পানির সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্থানীয় মানুষকে উচ্ছেদ ও হত্যা করা হয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে যাতে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল শনিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)–এর আয়োজনে দ্বিতীয় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা ভারত, জাপান ও চীনের সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তিগুলো উন্মুক্ত করার দাবি জানান। যেসব প্রকল্পের ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের আপত্তি আছে এবং পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তা বাতিলের দাবি জানান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জনগণের করের টাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। আর ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণের কারণে সেই সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। জলবায়ু সম্মেলনে দেশের প্রতিনিধিরা গিয়ে টাকাপয়সার কথা শুনলেই খুশি হয়ে যান। কিন্তু ওই টাকাও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈশ্বিক পরিসরে থ্রি জিরো ধারণা নিয়ে এসেছেন। এই ধারণার বাস্তবায়ন করতে হলে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো দূষণকারী প্রকল্প বাতিল করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ বলেন, ‘জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এই সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এই সরকার চায় দেশটা যেন একটা সবুজ দেশ হয়। আমরা আইনের শাসন চাই। পরিবেশ, নদী রক্ষায় আইন প্রয়োগ করব। পরিবেশ ধ্বংস, মানুষ ধ্বংস—সবকিছুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছে।’
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের কৃষি, খাদ্য এবং জীবন-জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। আমরা দেখেছি, এবার ইলিশ মাছের ডিম কম এসেছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে দেখা গেছে, সময়মতো বৃষ্টি হয়নি। নদীগুলো ভরাট-দখল হয়ে যাওয়ার ফলে মাছের চলাচলের
রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। হাওরের ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে এই রাস্তাগুলো আমাদের ভাঙতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে নদী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, পশ্চিমা এবং উন্নত দেশগুলো জলবায়ু উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। যে দায়ী দেশগুলো উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখছে, তাদেরকেই ক্ষতিপূরণ করতে হবে। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর দেশের ভেতরে দূষণকারীদের শাস্তি দিতে হবে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ লিডি ন্যাকপিল বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন কৃষি ও খাদ্যকে প্রভাবিত করছে, যা অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করছে পৃথিবীর দক্ষিণের দেশগুলোতে। আমরা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সমস্যার সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি। জলবায়ুর পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় তহবিল জরুরি। কপ২৯ এই তহবিল আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। এই তহবিল তৈরির জন্য আমাদের অনেক শক্তিশালী হয়ে কাজ করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক সংস্থা তারা ফাউন্ডেশনের ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কাইনান হগটন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন যে জ্বালানিনীতি গ্রহণ করছে, তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তরিত হতে হবে। এর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরিত হতে হবে।
সমাবেশ আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল বলেন, এই আয়োজনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অংশগ্রহণই সবচেয়ে বেশি। তাঁরা তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।