দুই মাস আগে আস্তানা, গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে আছেন চিকিৎসকের স্ত্রী
একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল তানজিম। গত ২৬ জুলাই থেকে তিনি স্ত্রী মায়েশা ইসলামসহ নিখোঁজ। মায়েশাকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি নির্জন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে চিকিৎসক সোহেল পালিয়েছেন।
আজ শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এই অভিযান চালায়। এ সময় মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামের পাহাড়ি এলাকায় শুক্রবার রাত থেকে সেখানকার একটি বাড়ি ঘিরে রাখেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের সদস্যরা। পরে আজ সকালে সিটিটিসির সোয়াট টিমের সদস্যরা গিয়ে অভিযান চালান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। তাঁদের সঙ্গে ৩ শিশুও রয়েছে।
ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ছয় নারীর মধ্যে সোহেল তানজিমে নামের একজন চিকিৎসকের স্ত্রীও রয়েছেন। তাঁর নাম মায়েশা ইসলাম। সোহেল সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত থাকলেও অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যান।
সোহেল ও তাঁর স্ত্রীর নিখোঁজ থাকার বিষয়ে গত ৩১ জুলাই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় জিডি করেছিলেন সোহেলের বাবা হেলালউদ্দীন। তাঁদের ব্যাপারে হেলালউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সোহেল ও তাঁর স্ত্রীর জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা কুলাউড়ার নির্জন এলাকায় দুই মাস আগে স্থায়ীভাবে আস্তানা গেড়ে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেখানে বিস্ফোরক, প্রশিক্ষণ সামগ্রীর পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য মজুত করেছিলেন তাঁরা। আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে তিন কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫০টি ডেটোনেট, কয়েক বস্তা বই, ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বুট ও বক্সিং ব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযানে বলপ্রয়োগ ছাড়াই নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের আটক করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান মো. আসাদুজ্জামান। পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের একটি উগ্র জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করে এত দিন তাঁরা যেসব সংগঠনের সন্ধান পেয়েছেন, এটি তার বাইরে নতুন সংগঠন। এর মূল ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। সংগঠনের এক সদস্যকে সম্প্রতি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আস্তানায় এ অভিযান চালানো হয়। সংগঠনটির সদস্যদের গড়া ওই আস্তানায় যাঁরা আসা-যাওয়া করতেন, তাঁদের পরিচয়ও পাওয়া গেছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গ্রেপ্তার হওয়া চার পুরুষ হলেন রফিকুল ইসলাম, হাফিজ উল্লাহ, খায়রুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলাম। তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে। এই ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাইরে দুই নারী জঙ্গিও আস্তানায় ছিলেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামে বেশ কিছু পাহাড়ি সরকারি খাসজমি রয়েছে। স্থানটি নির্জন। এর মধ্যে কিছু জমি রফিক মিয়া নামের দুবাইপ্রবাসী স্থানীয় এক বাসিন্দার দখলে রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা প্রায় দুই মাস আগে রফিক মিয়ার কাছ থেকে সাত লাখ টাকায় ৫০ শতক জমি কিনে বসতি স্থাপন করেন।
কর্মধা ইউপির চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জঙ্গিদের তৎপরতার ঘটনাটা আগে আমরা জানতাম না। তাঁরা স্থানীয় লোকজনকে বলতেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখানে এসেছেন। তাঁরা প্রায়ই গভীর জঙ্গলে ঢুকতেন। সেখানে কী করতেন, এলাকার কেউ সেটা জানতেন না।’