পঙ্​ক্তিমালা

ফুল, প্রস্ফুটিত  হও মনে

মহাদেব সাহা

বাইরে নয়, ফুল, তুমি প্রস্ফুটিত হও 

মনে

আমি চেয়ে দেখি;

তোমার স্পর্শ দাও প্রাণে,

মুগ্ধ করো নিঃশব্দ গানে,

গন্ধে নয়, ছন্দে মোহিত করো

মনপ্রাণ,

আমি শুনি নীরব বংশীধ্বনি অনন্তের 

গান;

তাই কোটিবর্ষ চেয়ে আছি অসীমের পানে

এই ধ্যানহীন ধ্যানে, 

আর কিছুই জানি না, ফুল, তুমি

প্রস্ফুটিত হও মনে।

তুমিও প্রমিতা

মুহম্মদ নূরুল হুদা

অনুপাতী হে সুন্দরী, নানা অনুপাতে

দৃষ্টিতে তোমার সৃষ্টি, প্রমিত প্রভাতে;

প্রভাত মানেই শুধু সূর্যোদয় নয়,

অষ্টপ্রহরের পাশে নানান সময়

আলো–আঁধারির বুকে উদয় তোমার,

তোমাকেও লিখেছিল যে কবি হোমার;

কালো, শাদা, তাম্রবর্ণ নানা গাত্ররং,

ত্বকের আড়ালে তবু লোহিত বরণ;

ট্রয়ের দেয়ালজুড়ে ছিলে ঘুরে ঘুরে,

এসেছিলে কুরুক্ষেত্রে তপোবনপুরে;

ঢাকার অদূরে ছিলে কবি চন্দ্রাবতী,

দেশে দেশে সর্ববেশে তোমার আরতি;

সুন্দরের নানা নিক্তি, তবুও প্রমিতা,

যে তুমি কবির প্রিয়া, প্রজ্ঞা পারমিতা।

স্বপ্নে-প্রতিস্বপ্নে

শিহাব সরকার

দুর্ভাগারা স্বপ্নে মরে পড়ে থাকে

ভোরবেলা বিলাপ। মহল্লা জাগছে।

দিবাস্বপ্নের ফাঁস লেগে কেউ চলে যায়

মঞ্চের ফুলকি থেকে দাবানল, ব্রাত্যরা পোড়ে,

কুমারী কাঁদে—এই সব নিয়ে নামি নবনাট্যে।

দূরের মঞ্চ থেকে গর্জে আসুক ডিসকোর ঢেউ

যা কিছু বিপ্লব, আগেই স্বপ্নে দেখা ভালো

মাঝে মাঝে, যেমন রাত্রির শেষ প্রহরে। 

বাংকারে বসে নিঝুম মধ্যরাত থেকে

সতর্ক বিপ্লবীরা জেগে আছে।

জানে না ওদের কোমরে বাতিল বেয়োনেট

শহরের রাস্তায় ডাকাত দল অ্যাম্বুশ পাতে,

ফাঁকা বন্দুক ছুড়ে সব কেড়ে নিয়ে যায়,

দিঘির তলায় জমেছে হারানো যুগের হাতিয়ার।

ঘড়িতে পাঁচটায় অফিস ছুটি

সাদা গাড়ির সঙ্গে বাদুড়ের বাস, মিনিবাস।

কাঁকড়ার মিছিলে আটকে গেছে বিহ্বল নারী

শহরের এই ছবি প্রতিদিন।

নিজেরই বোনা স্বপ্নের চাবুক সপাং সপাং

বিভোল অন্ধ ও খঞ্জেরা ঘরে চলেছেন,

কেউ দেখে না, এই সব হতভাগা কীভাবে

মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকে।

ফেরার পথে ছিনতাই হয়ে যায় সব

বিধ্বস্ত বিপ্লবী তবু নবযুগের স্বপ্ন দেখে।

রাত্রির পর রাত্রি কাটে নির্ঘুম

স্বপ্নে-প্রতিস্বপ্নে এইভাবে রাত জাগে, ভোর হয়

ঘুমের সঙ্গে বৈঠক

জাহিদ হায়দার 

জেগে উঠবার আলোচনা ফিরে আসছে বারবার। 

কী কী স্বপ্ন দেখি, সে কথা উঠছে বারবার।

ঘুমেরও শ্রেণিদ্বন্দ্ব আছে—বুঝি কিনা!

পাখিদের বলেছি, 

ভোরবেলা ডাকলেই তোমাদের সঙ্গ নেব।

ঘুমের মধ্যে আমি কতবার কথা বলেছি,

সবই লাল কালিতে নোট করেছে

ঘুমের প্রহরী।

নিশি পাওয়া মানুষ হেঁটে গেছি শস্য বুনতে,

গান করেছি দিগন্তের নৈঃশব্দ্যে।

বারবার ঘুরেফিরে আসছে একই প্রসঙ্গ,

জেগে থাকবার সাফল্য বলো,

অশ্রদ্ধেয় সার্থকতা বলো। 

মেজাজ শীতের নদীর মতো রাখতে হচ্ছে, 

যদি প্লাবনের স্বরে চিৎকার করে কিছু বলি

পড়শি গাছের ডালে

পাখিদের ঘুম ভেঙে যেতে পারে।

গোলাপ

শাহীন মোমতাজ

ফুটপাতে বসে থাকা শিশুটার চেয়ে 

নিজেকে অধিক শিশু মনে হয়,

যেহেতু আমার মধ্যে বেড়ে ওঠা নাই,

যেহেতু আমার মধ্যে সেই ছোট শিশুটার চেয়ে 

অধিক অর্জিত কোনো ভালোবাসা নাই।

তবু আমি ফুটপাতে বসে থেকে

সময়ক্ষেপণ করে চলি।

তবু আমি এক শ পঞ্চাশ টাকা ব্যয় করে কিনে আনা 

গোলাপের ভেতরে ঘ্রাণের অনুসন্ধান

করি এ শীতের কালো রাতে।