চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক মারধর, ‘মানবিক কারণে’ ছাত্রলীগের দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
সাংবাদিক পিটিয়ে বহিষ্কার হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা। ‘মানবিক কারণে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্ট, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি ৪ অক্টোবর এ সিদ্ধান্ত নেয়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এই দুই শিক্ষার্থী হলেন আইন বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির খালেদ মাসুদ ও সমাজতত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আরাফাত রায়হান। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি নেই। খালেদ বিলুপ্ত কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আরাফাত উপদপ্তর সম্পাদক পদে ছিলেন।
গত ১৯ জুন ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ নেতা–কর্মীর মারধরের শিকার হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্য।
দোস্ত মোহাম্মদের ভাষ্য, অনুমতি না নিয়ে চায়ের দোকানে বসায় খালেদ মাসুদ ও আরাফাত রায়হানসহ ১০ থেকে ১৫ ছাত্রলীগ কর্মী তাঁকে বেধড়ক পিটিয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরে তাঁরা আরও চড়াও হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির প্রতিবাদের মুখে ২১ জুন খালেদ ও আরাফাতকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও বহিষ্কার শুধু কাগজেই ছিল। ওই দুই নেতা ক্যাম্পাসেই ছিলেন। এ ব্যবস্থায় অসন্তোষ জানিয়েছে বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পালন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি। দোস্ত মোহাম্মদও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে একাধিকবার প্রক্টর কার্যালয়ের চিঠি দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব থাকে বোর্ড অব রেসিডেন্ট, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি। উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, দুজন ডিন ও দুজন প্রাধ্যক্ষ নিয়ে গঠিত হয় এ কমিটি। এ কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে উপচার্য শিরীণ আখতার আর সদস্যসচিব প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চেয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতারে কার্যালয়ে গেলে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী জানান, তিনি মিটিংয়ে আছেন। পরে তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলেও রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, এই দুই ছাত্রের মা–বাবা এসে মুচলেকা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আর কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত না থাকার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন তাঁরা। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করলে তাঁদের ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যেত। এসব কারণে মানবিক দিক বিবেচনায় বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এই দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্লিপ্ততার সীমা ছাড়িয়েছে। বারবার অপরাধীদের ক্ষমা করে সেটিই প্রমাণ করা হচ্ছে।
মারধরের শিকার দোস্ত মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কারণ ছাড়া তাঁর ওপর হামলা করেছিল ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। এমন ন্যক্কারজনক হামলার পরেও তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন নামমাত্র ছয় মাসের বহিষ্কার করেছিল। এখন সেটিও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটি করে রীতিমতো প্রতারণা ও অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।