মায়ের সঙ্গে কারাগারে ৩০৪ শিশু, সুরক্ষার আহ্বান সিআরএসির
দেশের ৬৮টি কারাগারে মায়ের সঙ্গে কারাযাপন করছে ৩০৪ শিশু। দণ্ডপ্রাপ্ত মায়েদের শিশুদের সুস্থ স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান প্রণয়ন করার আহ্বান জানিয়েছে চাইল্ডস রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ (সিআরএসি)।
আজ মঙ্গলবার কোয়ালিশনের সচিবালয় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। ১০টি শিশু অধিকারভিত্তিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত চাইল্ডস রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ ২০১৩ সাল থেকে শিশু অধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষায় কাজ করছে।
বিবৃতিতে কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কারাগার কোনোভাবেই একটি শিশুর জন্য আদর্শ স্থান হতে পারে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে দণ্ডপ্রাপ্ত মায়েদের সন্তানদের অধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। বর্তমান ব্যবস্থায় এই শিশুদের মায়েদের সঙ্গে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। তারা একটি স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দেশের সব শিশুর সুরক্ষা প্রদানে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোয়ালিশন মনে করে, বিদ্যমান আইনি কাঠামো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সন্তানের অধিকার সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মায়ের সঙ্গে ১০ মাস বয়সী এক শিশুর হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে ফাঁসির সেলে অবস্থান বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শিশুটির জন্য পর্যাপ্ত খাবার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিতে নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত মায়েদের সঙ্গে কনডেমড সেলে বসবাসকারী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে একটি প্রবিধান প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত আরেকটি সংবাদে দেখা যায়, ঋণের নির্ধারিত কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এক মা ও তাঁর সন্তানকে একসঙ্গে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
চাইল্ডস রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ শিশু অধিকার সুরক্ষায় এ বিষয়কে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত মায়ের শিশুদের সুস্থ-স্বাভাবিক ও পরিপূর্ণ শারীরিক-মানসিক বিকাশে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান প্রণয়ন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে বলা হয়, ফাঁসির সেলের আয়তন প্রায় ১০ ফুট বাই ১০ ফুট, সেলগুলোতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং সরাসরি পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। দিনে দেড় ঘণ্টার জন্য সেলের তালা খুলে দেওয়া হয়। সারা রাত জ্বলে উচ্চ আলোসম্পন্ন বৈদ্যুতিক বাতি। একজন সশ্রম কারাবন্দী যে হারে খাবার পান, ফাঁসির সেলে বন্দী মায়েদেরও একই নিয়মে খাবার দেওয়া হয়।
কোয়ালিশন এই বিশেষ পরিস্থিতির শিকার শিশুদের ‘সর্বোত্তম স্বার্থ’ বিবেচনায় নিয়ে তাদের মানবাধিকার রক্ষা ও শারীরিক-মানসিক বিকাশ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় আইন, প্রবিধান বা নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি কারাগারে শিশুদের বিকাশের অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত মা এবং তাদের সন্তানদের বয়স ও পুষ্টির চাহিদা বিবেচনায় কারাগারে পরিমিত খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করারও দাবি জানিয়েছে তারা।