কর্ণফুলীতে আবারও হাতির আক্রমণ, স্ত্রী ও মায়ের সামনেই যুবককে আছাড় মেরে হত্যা
চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও পাশের কর্ণফুলী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে হাতির আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত সোমবার আনোয়ারার বটতলীতে এক নারীর মৃত্যু হয় হাতির হামলায়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই আজ বুধবার ভোর চারটার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠানে একটি বন্য হাতি আছড়ে মারে মো. আকবার (৩৮) নামের এক যুবককে।
নিহত আকবরের মা জোহরা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাড়া প্রতিবেশীর চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হয় আমার ছেলে আকবর। পেছন পেছন বের হই আমি ও তার স্ত্রী মিনু আকতার। ঘরের উঠানেই হাতির সামনে পড়ে যায় আকবর। সঙ্গে সঙ্গে দৌড় দিতে চেষ্টা করে সে। কিন্তু উঠোনের সীমানায় রাখা জালে পেঁচিয়ে পড়ে যায় সে। হাতিটি সেখানে গিয়ে প্রথমে তাকে পায়ে পিষ্ট করে এরপর শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। আমাদের চোখের সামনেই ছেলেটি মারা গেল।’
কর্ণফুলীর বড় উঠান ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে হাতির আক্রমণে আকবরের বাড়ি। পেশায় তিনি ওয়েল্ডিংমিস্ত্রি। আজ সকালে সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হাতির আক্রমণের চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারদিকে। গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ির বেড়া, দেয়াল তছনছ করেছে হাতি। আকবরের উঠানে জড়ো হওয়া মানুষের চোখেমুখে শোক ও আতঙ্কের ছাপ।
গ্রামবাসীদের কয়েকজন জানান, মঙ্গলবার রাত দুইটার সময় দেয়াঙ পাহাড় থেকে একটি হাতি নামে এলাকায়। ওই সময় গ্রামবাসী মো. কামালের রান্নাঘর ও মো. আনোয়ারের ঘরের বেড়া ভেঙে দেয় হাতিটি। এরপর একটি খামারের ৫০-৬০টি কলাগাছও উপড়ে ফেলে। ভোর চারটার দিকে একটি মুদিদোকান ভেঙে দুই বস্তা চাল ছিটিয়ে দেয়। এরপর দোকানের পেছনে আকবরের উঠোনে গেলে আক্রান্ত হন তিনি। সেখানেই হাতিটি আকবরকে হত্যা করে।
আকবরের বাড়িতে ভিড় করা মানুষের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেয়াঙ পাহাড় থেকে হাতিগুলো সরিয়ে দেওয়ার দাবি তাঁদের। হাতিগুলো সেখান থেকে না তাড়ালে দিনের পর দিন মানুষের জানমালের ক্ষতি হবে।
বন বিভাগের লোকজন জানান, ২০২০ সালের দিকে বন বিভাগ ছয়টি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে ৬০ জন লোক নিয়ে। তাঁদের বাঁশি, মাইক ও পোশাক দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হাতি নামার সঙ্গে সঙ্গে সংকেত দিলে জনগণ আগুন ও আতশবাজি নিয়ে সজাগ হন। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ের আশপাশের এলাকায় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ছয় বছরে হাতির আক্রমণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, বন্য হাতি বংশপরম্পরায় তার অতীতের পথ ধরে হাঁটাচলা করে। একবার সে যে জায়গা দিয়ে হাঁটাচলা করেছে, সে বারবার ওই জায়গা দিয়েই হাঁটাচলা করবে। আর এতে বিঘ্ন ঘটলে মারমুখী হয়ে ওঠে। গাছপালা বেশি না থাকলেও একসময় দেয়াঙ পাহাড়ে হাতি স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করতে পারত। কিন্তু এখন তা পারছে না। এ কারণে কিছুটা ক্ষুব্ধ তারা। একটি হাতি দৈনিক ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার হাঁটে। আর খাবার খায় প্রায় ১৫০ কেজি। সব মিলিয়ে হাতির জন্য বিশাল জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু তা এখন নেই।
আনিসুজ্জামান শেখ আরও বলেন, দেয়াঙ পাহাড়ে খাবার ও সুপেয় পানি পাওয়ায় চারটি হাতি অবস্থান নিয়েছে। হয়তো এসব হাতিকে ঢিল ছোড়া হয়েছে, না হয় উত্ত্যক্ত কিংবা বিরক্ত করা হয়েছে। অকারণে হাতি মানুষকে আক্রমণ করে না।