হিরো আলমের মুচলেকায় যা আছে
আশরাফুল আলম সাঈদ ওরফে হিরো আলমকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ডেকে মুচলেকা নেওয়ার ঘটনায় দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।
দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও হিরো আলমকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিবিসি, এএফপিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম হিরো আলমকে পুলিশ নিয়ে গেছে—এমন সংবাদ প্রকাশের পর তাঁকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও একই কথা বলেন।
হিরো আলমের অভিযোগ, গত ২৭ জুলাই পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে আট ঘণ্টা আটকে রাখে এবং মুচলেকা নেয়। পুলিশ বলেছে, তিনি (হিরো আলম) কুৎসিত। তিনি নায়ক হন কী করে। তারা (পুলিশ) তাঁর নাম থেকে হিরো বাদ দিতে বলছে। তাঁর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে যে তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত গাইবেন না।
কী ছিল মুচলেকায়
হিরো আলমের সই করা মুচলেকায় লেখা আছে, ‘আমি আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম এই মর্মে মুচলেকা প্রদান করছি যে ভবিষ্যতে আমি চলচিত্র বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে কোনো অশ্লীল কমেডি, অডিও-ভিডিও গান, সংস্কৃতি বা ভাষার বিকৃতি, কোনো নির্দিষ্ট পেশা বা পোশাকের অবমাননা বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করাসহ মানহানিকর ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা থেকে বিরত থাকব।
আমার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজ দায়িত্বে উপরিউক্ত বিষয়ের সকল ধরনের অডিও-ভিডিও কনটেন্ট সরিয়ে ফেলব বা ব্যক্তি উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করব। ভবিষ্যতে আমি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ অপরাধ করব না। এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে আমার বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
যেকোনো সময়, যেকোনো অবস্থায় ডিবি পুলিশের তলবমতে ডিবি কার্যালয়ে হাজির হতে বাধ্য থাকব। ভবিষ্যতে আমি আর এ ধরনের কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করব না মর্মে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ, অর্গানাইজড, ক্রাইম-ইনভেস্টিগেশন টিম, ডিএমপি-ঢাকায় মুচলেকা প্রদান করলাম। আমি সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে, বিনা প্ররোচনায় উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে অত্র মুচলেকা প্রদান করলাম।’ মুচলেকায় মো. মাহবুব নামের একজনের স্বাক্ষর রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, হিরো আলমকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই তথ্য যাঁরা প্রচার করছেন, তাঁরা মিথ্যা বলছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ছিল, তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাদের জন্য ডেকে নেওয়া হয়েছিল। হিরো আলমকে গান গাইতে নিষেধ করা হয়নি, কাউকে যেন বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা না হয়, সেটাই বলা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো বিশেষ বাহিনীর পোশাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ ডিবি কার্যালয়ে ডেকে হিরো আলমের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়ার বিষয়ে জার্মানির সম্প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘সমাজ–সংস্কৃতি নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, এখানে তাঁদের কথা বলা উচিত। যেহেতু এখানে কেউ কিছু বলছে না, পুলিশ যদি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে অসুবিধাটা কী? আমাদের প্রচলিত আইনে আমি কোনো অপরাধ দেখি না।
কিন্তু এখানে একটা বিষয় আছে, কোনো কিছু বিকৃত করা কিন্তু অপরাধ। রবীন্দ্রনাথের গান তো নির্দিষ্ট একটা সুরেই গাইতে হয়। এটা যদি কেউ বিকৃত করে, তাহলে তাকে কি আইনের আওতায় আনতে হবে না?’
এর আগে ‘আমার পরান যাহা চায়’ শিরোনামে রবীন্দ্রসংগীতসহ তিনটি গান মিউজিক ভিডিও আকারে সামাজিক মাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ তুলে সেগুলো অপসারণে হিরো আলমের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।