পুলিশ ঘিরে রাখায় পল্টন মোড়ে সমাবেশ করতে পারেনি গণতন্ত্র মঞ্চ

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জেনায়েদ সাকিছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে আজ বুধবার পূর্বনির্ধারিত প্রতিবাদ সভা করতে পারেনি গণতন্ত্র মঞ্চ। পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে রাখায় সেখানে সমাবেশ করা যায়নি বলে মঞ্চের নেতারা অভিযোগ করেন। পরে পল্টন মোড় থেকে বেশ খানিকটা দূরে ইমামবাড়ির সামনের ফুটপাতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।

সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁদের মাইক কেড়ে নিয়েছে। শান্তিপূর্ণ সভা করতে দেয়নি। এর প্রতিবাদে তাঁরা আগামীকাল বৃহস্পতিবার বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকারি দলের হামলা, পুলিশের গুলিতে দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে আজ বেলা ১১টায় পুরানা পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ প্রতিবাদ সভার কর্মসূচির ডাক দেয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকেই পুরানা পল্টন মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সড়কের দুই পাশে ও মোড়ে পুলিশের অনেক গাড়ি, আসামি বহনকারী প্রিজন ভ্যান ও জলকামান মোতায়েন করা হয়। স্বাভাবিক দিনের মতোই পুরানা পল্টন মোড়ে এমনিতে ছিল প্রচণ্ড যানজট। তার ওপর বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও তাদের গাড়ির বহর থাকায় সেখানে সমাবেশ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না।

পরে দুপুর ১২টার দিকে পল্টন মোড় থেকে উত্তরে বিজয় নগরের দিকে যাওয়া সড়কে ইমামবাড়ির সামনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ সময় আশপাশে পুলিশ জড়ো হতে থাকায় আয়োজকেরা দ্রুত সভা শেষ করেন।

সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জেনায়েদ সাকি জানান, পুলিশ পুরানা পল্টন মোড় দখল করে রেখে তাঁদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দেয়নি। তাঁদের মাইক কেড়ে নিয়েছে। জলকামান মোতায়েন করা হয়েছে। ন্যক্কারজনকভাবে তারা শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে নির্বিচার হত্যা করেছে। শুধু রাজপথে নয়, ঘরের ভেতরে, বাড়ির ছাদে শিশু–কিশোরেরা গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। এই হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে যখন সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ পথে নামছেন, তখন তাঁদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

গণসংহতি আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, সরকার কোনো তদন্ত না করেই এই হত্যার দায় বিএনপি-জামায়াতের ওপরে চাপিয়ে দিয়ে গণগ্রেপ্তার করছে। সারা দেশকেই আজ কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। দেশে এক ভীতিকর, আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। দ্রুত এর অবসান করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, পাকিস্তান আমলে যেমন ব্লকরেইড করে মুক্তিযোদ্ধাদের তুলে নেওয়া হতো, এখন ঠিক একই কায়দার পাড়ামহল্লায় রাতের আঁধারে ব্লকরেইড করে লোকজনদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। রিমান্ডের নামে তাঁদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে তাঁদের বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এখনো তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে। দেশজুড়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আজ সারা দেশে ঘরে ঘরে সরকারের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।

সাইফুল হক অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সব বন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি ও ছাত্র-জনতার হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সম্পাদক আবু ইউসুফ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সম্পাদক দিদারুল ভূঁইয়া।

সমাবেশে জানানো হয়, আগামীকাল বেলা ১১টায় পুরানা পল্টনের মেহেরবা প্লাজায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।