অক্সিজেন হচ্ছে জীবন। হাসপাতালে ওষুধের বিকল্প থাকতে পারে, কিন্তু জীবন বাঁচাতে অক্সিজেনের কোনো বিকল্প নেই। সারা বিশ্বে মেডিকেল অক্সিজেনের অভাবে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনের একটি অধিবেশনে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। জার্মানির রাজধানী বার্লিনে তিন দিনের সম্মেলন আজ শেষ হয়েছে। অক্সিজেন নিয়ে এই বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করেছিল ল্যানসেট অক্সিজেন কমিশন।
অধিবেশনের শুরুতে ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথের এডিটর ইন চিফ জো মিলান বলেন, দীর্ঘস্থায়ী রোগ, নবজাতক, সার্জারি ও নিউমোনিয়ায় অক্সিজেন দরকার হয়। কিন্তু বহু দেশের হাসপাতালে প্রয়োজনের সময় অক্সিজেন পাওয়া যায় না। উন্নয়নশীল দেশগুলোর হাসপাতালে অক্সিজেন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা ও সুপারিশ তৈরির জন্য ল্যানসেট ২০২২ সালে একটি কমিশন তৈরি করে। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে রিপোর্ট প্রকাশ করবে কমিশন।
সারা বিশ্বের ২০ বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত কমিশনের একজন সদস্য আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী আহমাদ এহসানূর রহমান। অধিবেশনের পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশের হাসপাতালে ৭০ লাখ মানুষের অক্সিজেন দরকার হয়।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হামিস গ্রামাম বলেন, অক্সিজেন পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য আছে। সমস্যা দূর করতে চারটি বিষয়ে জোর দিতে হবে—সব প্রতিষ্ঠানে পালস অক্সিমিটার নিশ্চিত করতে হবে, প্রান্তিক অঞ্চলে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, কাজে ও অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অক্সিজেনকে স্থায়ীভাবে বসাতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আফ্রিকা সিডিসির ভাইস চেয়ারম্যান রাজি তাজউদ্দীন বলেন, পর্যাপ্তসংখ্যক কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার (স্বাস্থ্যকর্মী) না থাকলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অক্সিজেন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য বিনিয়োগ দরকার।
অক্সিজেন মানে জীবন, এমন মন্তব্য করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি জেনেথ ভিয়াজ বলেন, কোভিড মহামারির সময় বিশ্ব অক্সিজেনের প্রয়োজন মর্মে মর্মে অনুভব করতে পেরেছে। আরেকটি মহামারির আগে অক্সিজেনের সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা
এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য শীর্ষ সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করেছে জার্মানি, ফ্রান্স ও নরওয়ে সরকার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ‘হেলথ ফর অল, অল ফর হেলথ’ শীর্ষক বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য দেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজ আমাদের সবাইকেই উপকৃত করেছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করা।’
এ সময় গেটস ফাউন্ডেশনের চেয়ার বিল গেটস বলেন, ‘বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান বৈশ্বিকভাবে করতে হবে। সমন্বিতভাবে অর্থের জোগাড় করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়।
তিন দিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় তিন হাজার গবেষক-বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ অংশ নিয়েছেন। এতে ৫০টির বেশি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসব অধিবেশনে সাড়ে তিন শর বেশি বিশেষজ্ঞ কথা বলেছেন।