মহামারি রোধে চট্টগ্রামে গবেষণা ইউনিট চালুর উদ্যোগ
চট্টগ্রামে এ বছরই চালু হবে মহামারিসংক্রান্ত এপিডেমিওলজিক্যাল (রোগবিস্তার বিজ্ঞান) ইউনিট। মহামারির আকার ধারণ করতে পারে, এ রকম বিভিন্ন সংক্রামক রোগের গবেষণা কার্যক্রম সহজ করতে এই ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ওপর চাপ কমাতে জেলাভিত্তিক এই গবেষণা ইউনিট কাজ করবে। এতে করে আর ঢাকার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের ইপিআই ভবনের তৃতীয় তলায় এই গবেষণা ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। মার্চ নাগাদ এই তৃতীয় তলার নির্মাণকাজসহ গবেষণা ইউনিটের দরপত্র ঘোষণা করা হবে। এরপর আগস্টের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। বছরের শেষ ভাগে ইউনিট চালু করা হতে পারে। স্থানীয়ভাবে নমুনা সংগ্রহ করে এখানে এবং ঢাকায় দুই স্থানে গবেষণা চলবে।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আইইডিসিআরে মহামারিসংক্রান্ত রোগগুলোর গবেষণা হয়। সারা দেশ থেকে সেখানে নমুনা পাঠানো হয়। কাজগুলো সহজ করতে এবং জেলা পর্যায়ে গবেষণার কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য জেলাভিত্তিক এপিডেমিওলজিক্যাল ইউনিট করা হচ্ছে। এতে করে চট্টগ্রামের নমুনা চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করে এখানে গবেষণা করার সুযোগ থাকবে। এ বছরই এই ইউনিট কার্যক্রম শুরু করবে।
গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসচিব মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল এপিডেমিওলজিক্যাল ইউনিট স্থাপনের স্থান পরিদর্শনে চট্টগ্রামে আসে। তারা সিভিল সার্জনের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় করে। তারা ইউনিটের খুঁটিনাটি বিষয়ে কথা বলে। ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, করোনা কিংবা অন্যান্য সংক্রামক রোগের মহামারি ঠেকাতে এই ইউনিট কাজে লাগবে বলে তারা মনে করে।
উল্লেখ্য, গত বছর চট্টগ্রামে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ১০৭ জন মারা যান। আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে এটা সর্বোচ্চ। ডেঙ্গু মৌসুমে আইইডিসিআরের গবেষকেরা চট্টগ্রামে এসে রোগীর নমুনার পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক এডিস মশার লার্ভা নিয়ে যান। পরে তা নিয়ে ঢাকায় গবেষণা করা হয়।
একইভাবে ২০২৩ ও ২০২২ সালে চট্টগ্রামের হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পানিবাহিত এই রোগের কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিরোধের জন্য আইইডিসিআর থেকে গবেষক দল চট্টগ্রাম আসে। তারা নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার প্রায় দুই মাস পর এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
স্থানীয় পর্যায়ে মহামারি গবেষণা ইউনিট চালু হলে গবেষণার কাজ দ্রুততার সঙ্গে করা যাবে বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। এ ক্ষেত্রে খরচও কমে যাবে। দ্রুত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কিংবা উপদ্রুত এলাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যেমন সহজ হবে, তেমনি চিকিৎসার পদ্ধতিও নির্ধারণ করা যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরেও পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, মহামারি গবেষণা ইউনিটটি স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন রোগের গবেষণায় কাজ করবে। এতে করে দ্রুত নমুনা সংগ্রহ ও গবেষণার কাজ শেষে প্রতিবেদন দেওয়া যাবে। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এতে করে রোগের বিস্তার ঠেকানো ও প্রতিরোধ কার্যক্রম সহজ হবে।