‘পান্থকুঞ্জ-হাতিরঝিল ধ্বংস করে’ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল ধ্বংস করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে আজ শনিবার মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশ নির্মাণ বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশের পরিবেশ সচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’। আজ শনিবার কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়। আন্দোলনকারীরা বলেছেন, কারওয়ানবাজারের পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল ধ্বংস করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে।

কর্মসূচি থেকে আরও কয়েকটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য হাতিরঝিল ভরাট বন্ধ করতে হবে; এক্সপ্রেসওয়ের জন্য স্থাপন করা পিলারগুলো সরিয়ে জলাধারের পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করতে হবে; পান্থকুঞ্জ পার্কে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে; পার্কের আয়তন-সীমানা অনুযায়ী ঋতুগত ভিন্নতা বিবেচনায় রেখে দেশি প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে; পার্কের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিকল্পনাকারী, নকশাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিবৃতি পাঠ করেন সংগঠনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব। তাতে বলা হয়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি শুরু থেকেই দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এটি পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন ও জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যমান পরিবেশ, জলাধার কিংবা প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা নীতি ও আইন লঙ্ঘন করে এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিরঝিলের জলাধার ভরাট করে এর শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রকল্পের অধীনে কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা হাতিরঝিলের মতো এই অঞ্চলে টিকে থাকা সংবেদনশীল জলাশয়ের মারাত্মক ক্ষতি করবে। প্রকল্পের ৪১টি পিলারে হাতিরঝিলের পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশ কিছু পিলার বসানোর জন্য বালু-মাটি দিয়ে হাতিরঝিল ভরাট করা হয়েছে। এতে ঝিলের সৌন্দর্য, প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এক্সপ্রেসওয়ের একটি র‍্যাম্প পান্থকুঞ্জ পার্কের বুক চিরে কারওয়ান বাজার গোলচত্বরের দিকে নামানোর পরিকল্পনা হচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সংযোগ সড়কটি পান্থকুঞ্জ পার্ক হয়ে পলাশী পর্যন্ত যাবে। এ কারণে ইতিমধ্যে পার্কের নানা বয়সী অধিকাংশ গাছ কাটা হয়েছে। জলাধার ভরাট ও পান্থকুঞ্জ পার্কের গাছ কাটা পরিবেশ ও জলাধারসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ও পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মাদ খান। তিনি এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে না। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হবে।

লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে পরিবেশকর্মী মিজানুর রহমান, আইনজীবী মাহবুবুল আলম, লেখক ও সাংবাদিক শিমু নাসের, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান, পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।