নাশকতার মামলা: এক দিনে ১২৯ জনের সাজা
বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা-হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে করা পৃথক চারটি মামলায় এক দিনে ১২৯ জনের সাজা হয়েছে। এর মধ্যে এক মামলাতেই সাজা হয়েছে ৯৩ জনের। বাকি তিন মামলায় সাজা হয়েছে আরও ৩৬ জনের।
সাজা হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী। যে চারটি মামলায় বৃহস্পতিবার সাজা হয়েছে তার একটি ২০১৩ সালের, অন্য তিনটি ২০১৮ সালের। রায় ঘোষণার সময় বেশির ভাগ আসামি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেন।
এ নিয়ে গত প্রায় পাঁচ মাসে ৯২ মামলায় ১ হাজার ৪৬০ জনের সাজা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব মামলায় সাজা হয়েছে, সেসব ‘রাজনৈতিক মামলা’ বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলটির আইনজীবী নেতারা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, মাঠের রাজনীতিতে যাঁরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রাখতে পারেন, তেমন নেতা-কর্মীদের সাজা হচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের রাজনীতি থেকে বিতাড়ন করাই সরকারের উদ্দেশ্য।
তবে বিএনপির আইনজীবী নেতাদের এমন দাবি নাকচ করে আসছে রাষ্ট্রপক্ষ। আর চলতি ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, মামলাজট কমাতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পুরোনো মামলা নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে বিএনপি কোনো লক্ষ্যবস্তু নয়।
বৃহস্পতিবার যে মামলায় ৯৩ জনের সাজা হয়েছে, সেটি রাজধানীর তুরাগ থানায় করা হয়েছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এর সাড়ে তিন মাস পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত (২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর) হয়।
এ মামলার এজাহারের বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তুরাগের ধউর চৌরাস্তাসংলগ্ন মহাসড়কে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বিশৃঙ্খলা করার জন্য সমবেত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান।
এ ঘটনার মামলায় তুরাগ থানা বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমানসহ ৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। রায়ে ৯৩ জনের প্রত্যেককে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় কেউ আদালতে হাজির ছিলেন না। আদালত তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
তুরাগ ছাড়াও সূত্রাপুর, রামপুরা ও বংশাল থানায় বিএনপি এবং জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা পৃথক তিনটি মামলার রায় হয়েছে এদিন।
সূত্রাপুর থানার মামলা
মামলায় পুলিশের উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দুই মাস আগে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া এলাকা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আসেন। বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে তাঁরা সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তাঁরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে পুলিশের দুজন সদস্য আহত হন।
এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় ১১ জনের নামে মামলা হয়। এ মামলায় ২০১৯ সালের ১০ জুন আদালতে নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। আদালত গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে পুলিশের ছয়জন সদস্যদের আদালতে হাজির করে।
এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় গত ১৩ নভেম্বর, শেষ হয় ১৪ ডিসেম্বর। রায়ে আটজনের প্রত্যেককে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। খালাস পেয়েছেন একজন। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীম বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
রামপুরা থানার মামলা
মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর রামপুরার বউবাজার এলাকায় জামায়াতের ৫০ থেকে ৬০ জন নেতা-কর্মী জড়ো হন। তাঁরা লাঠি ও রড নিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে রামপুরার হাজীপাড়ার দিকে আসতে থাকেন। এতে বাধা দিলে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।
এ মামলায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। গত বছরের ৮ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলার ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে চারজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু গত ৩১ মে, শেষ হয় ৬ ডিসেম্বর।
রায়ে ১৩ জনকে দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। খালাস দেওয়া হয়েছে পাঁচজনকে। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহ এ রায় দেন।
বংশাল থানার মামলা
২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে বংশাল থানায় করা মামলায় ১৫ জনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। খালাস দেওয়া হয়েছে ৪৭ জনকে।
ঢাকার সিএমএম আদালতের এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিন এ রায় দেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, দণ্ডপ্রাপ্তদের সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী।