মহাসড়ক নির্মাণের ব্যয় বাংলাদেশে বেশি

ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় কয়েক গুণ বেশি।

বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় শতকোটি টাকা বা এর চেয়ে বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তো বটেই, এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণের ব্যয় কয়েক গুণ বেশি। ফলে মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ দেশে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে এলেঙ্গা থেকে রংপুর এবং ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে তামাবিল পর্যন্ত চার লেন নির্মাণ প্রকল্প চলমান। এলেঙ্গা–রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা। ঢাকা–সিলেট–তামাবিল মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ১১৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের একাংশ চার লেন করতে নেওয়া প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৩০৬ কোটি টাকা।

এর আগে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেন করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।

এসব মহাসড়ক দুই লেনের ছিল। আরও দুই লেন বাড়ানো হয়েছে বা হচ্ছে। এর বাইরে দুই পাশে স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য দুটি পৃথক লেন রাখা হয়েছে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্রে দেখানো হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে খরচ হয়েছে ৬৩ দশমিক ৫ কোটি ডলার, যা ভারতের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ গুণ বেশি।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্রেও মহাসড়ক নির্মাণে বিপুল ব্যয়ের বিষয়টি উঠে এসেছে। গত ১ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্বেতপত্র হস্তান্তর করা হয়। এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

শ্বেতপত্রে দেখানো হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে খরচ হয়েছে ৬৩ দশমিক ৫ কোটি ডলার, যা ভারতের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ গুণ বেশি। এ ধরনের সড়ক নির্মাণে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের খরচ ২ দশমিক ১৫ গুণ বেশি। চীনে একই ধরনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে অর্ধেক খরচে। তুরস্কে এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে যে খরচ হয়, বাংলাদেশে হয়েছে এর প্রায় চার গুণ।

২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অধীন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশি অর্থায়নের পাশাপাশি বিদেশি ঋণও রয়েছে। বেশির ভাগ অর্থই খরচ হয়েছে সড়ক ও সেতু নির্মাণে।

বিগত সরকারের আমলে সব অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয় ভারতসহ আশপাশের দেশের চেয়ে বেশি হয়েছে। কারণ, আগেই ঠিকাদার ঠিক করে রাখা হতো। সেই অনুযায়ী ব্যয় ও দরপত্রের শর্ত তৈরি করত। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই এত ব্যয়।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা

গত ৯ অক্টোবর সওজের নির্মাণকাজে দুর্নীতির বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে বলা হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে সওজে উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকা। টিআইবি বলেছে, ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে এ দুর্নীতি হয়েছে। পক্ষগুলো হলো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনীতিক; আমলা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে সব অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয় ভারতসহ আশপাশের দেশের চেয়ে বেশি হয়েছে। কারণ, আগেই ঠিকাদার ঠিক করে রাখা হতো। সেই অনুযায়ী ব্যয় ও দরপত্রের শর্ত তৈরি করত। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই এত ব্যয়। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার নতুন প্রকল্পে ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

গত ৯ অক্টোবর সওজের নির্মাণকাজে দুর্নীতির বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে বলা হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে সওজে উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়েছে।

সাসেক-২ প্রকল্পে যেভাবে ব্যয় বেড়েছে

সাউথ এশিয়ান সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন করিডর, সংক্ষেপে সাসেক নামে পরিচিত। সাসেক-১ প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই ২০১৬ সালে এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় প্রায় ৬৩ কোটি টাকা। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২১ সালে। ২০১৯ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হলো ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২৪ সাল। ২০২৩ সালে বিশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় দাঁড়াল ১৮ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের পর ব্যয় গিয়ে ঠেকেছে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকায়। প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে হলো ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এখন প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১০০ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ।

এ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরির জন্য জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, করোনা মহামারি, বন্যা পরিস্থিতি ইত্যাদি কারণ বলা হয়েছে। ফলে জমি ও পণ্যের দাম বেড়েছে। পরামর্শকদের পেছনে বেড়েছে ব্যয়। তবে সওজ সূত্র বলছে, প্রকল্প প্রস্তাব প্রতিবার সংশোধনের সময় নতুন নতুন উড়ালসড়ক, পাতালপথসহ নানা অঙ্গ যুক্ত করা হয়েছে। বারবার নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ ব্যয় বেড়েছে।

২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অধীন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশি অর্থায়নের পাশাপাশি বিদেশি ঋণও রয়েছে। বেশির ভাগ অর্থই খরচ হয়েছে সড়ক ও সেতু নির্মাণে।

এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পের মূল কাজ ১১টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ৯টি ভাগ সড়ক, সেতু ও উড়ালসড়ক নির্মাণ–সংক্রান্ত। দুটি ভাগে সওজের গবেষণাগারের উন্নয়ন ও ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন। কাজ পেয়েছে চীনের পাঁচটি ও বাংলাদেশের চারটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। যৌথ উদ্যোগে অন্য দেশের কিছু ঠিকাদারও যুক্ত আছেন।

সওজ সূত্র জানায়, ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করার পর কাজ বৃদ্ধি ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে প্রতিটি ভাগের কাজে ১৮ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বাড়ানো (ভ্যারিয়েশন) হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৬ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে বগুড়া অংশের সাড়ে ২২ কিলোমিটার কাজে। এটির ঠিকাদার চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও জাপানের তানিতা (যৌথ)। প্রায় ৪২ শতাংশ ব্যয় বাড়ানো বগুড়ার আরেক অংশের কাজের ঠিকাদার কেএমসি-মনিকো (যৌথ)। বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড দুটি ভাগের কাজ পেয়েছে। একটিতে সাড়ে ৪১ ও অন্যটিতে ৩৪ শতাংশ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। একটি ভাগে যুক্তরাজ্যের হেগো লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে দেশি কোম্পানি মীর আক্তার লিমিটেড। তাদের ব্যয় বেড়েছে ২২ শতাংশ।

দেশে চালু হওয়া মহাসড়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক, যা এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত।

দেশি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই) লিমিটেড সওজের গবেষণাগার উন্নয়ন ও ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের দুটি ভাগের কাজ পেয়েছে। তাদের একটি ভাগে ৪০ ও অন্যটিতে ৩৫ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।

সওজ সূত্র বলছে, এনডিইর দুটি ভাগে বেশির ভাগ কাজই যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপন–সংক্রান্ত। কিছু ভবন নির্মাণের কাজও রয়েছে। সড়ক ও সেতু নির্মাণকাজের সঙ্গে মিল রেখে তারাও ব্যয় বাড়িয়েছে।

বিভাগীয় দরপত্রে ১৫ শতাংশের বেশি ভ্যারিয়েশন নিষেধ, কিন্তু বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোয় এমন নিয়ম না থাকলেও ১৫ শতাংশের সীমা মানার রীতি আছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভ্যারিয়েশনের ক্ষেত্রে কোনো রীতিই মানা হয়নি।

সাসেক-২ প্রকল্পের পরিচালক ওয়ালিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যারিয়েশন না হলে তো কম্প্রোমাইজড প্রকল্প হবে। কারণ, ২০১৩ সালের দিকে নকশা করা হয়েছে। প্রকল্প নেওয়ার সময় অনেক খরচ কাটছাঁট করা হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে চলছে না। তখন বাধ্য হয়ে বাড়াতে হয়েছে।

এ ধরনের বড় প্রকল্পে দুর্নীতি, অপব্যয় ও অযৌক্তিক ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ। প্রকল্প প্রণয়নের সময়ই অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নানা অঙ্গ যুক্ত করা হয়। এতে সময় বাড়ে, ব্যয়ও বেড়ে যায়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান

সবচেয়ে ব্যয়বহুল কক্সবাজার সড়ক

চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৫১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২৮ কিলোমিটার অংশ চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো কাজ শুরু হয়নি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে অনুমোদন দেওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা।

এ প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা আসবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ হিসেবে।

দেশে চালু হওয়া মহাসড়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক, যা এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত। ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণে দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। প্রথম প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে হয় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটিতে নতুন বেশ কিছু অঙ্গ যুক্ত হওয়ায় বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেওয়া হয় দ্বিতীয় প্রকল্প।

দ্বিতীয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। দুই প্রকল্প মিলিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় প্রায় ২০১ কোটি টাকা। শুরুতে এই ব্যয় ছিল প্রায় ১১৪ কোটি টাকা।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের বড় প্রকল্পে দুর্নীতি, অপব্যয় ও অযৌক্তিক ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ। প্রকল্প প্রণয়নের সময়ই অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নানা অঙ্গ যুক্ত করা হয়। এতে সময় বাড়ে, ব্যয়ও বেড়ে যায়।

সড়ক নির্মাণ ব্যয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ

গত ডিসেম্বরে প্রকাশ করা শ্বেতপত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতি কিলোমিটার চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয়ের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ৬৩ দশমিক ৫ কোটি ডলার। চীনে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয় ৩৯ কোটি ডলার। ভারতে একই ধরনের মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় আরও কম, ১৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার। পাকিস্তানে এ ব্যয় ২৯ দশমিক ৫ কোটি ডলার। ইন্দোনেশিয়ায় ২১ দশমিক ৫ কোটি ডলার, ফিলিপাইনে ১১ দশমিক ৫ কোটি ডলার আর তুরস্কে ১৭ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভাটির দেশ বলে সড়ক নির্মাণে মাটির কাজ একটু বেশি লাগে। অনেক পণ্যসামগ্রীও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এগুলো যৌক্তিক খরচ, কিন্তু বেশি ব্যয় বাড়ে অযৌক্তিক খরচের কারণে। তিনি প্রশ্ন করেন, সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রাডোসহ দামি গাড়ি কেন কিনতে হবে? প্রশিক্ষণের নামে প্রকল্পের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নেই এমন লোকও কয়েকটি দেশ ঘুরে বেড়ান কেন?