রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে গ্রেপ্তার ৫৫ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁদের মধ্যে অন্তত আটজন নারী রয়েছেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গতকাল রোববার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে পল্টন থানা–পুলিশ ৪২ জন এবং শাহবাগ থানা–পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। আজ সোমবার তাঁদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। অপর দিকে আসামিপক্ষ থেকে প্রত্যেকের জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের প্রত্যেককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার দুপুরে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল তিন মাস আগে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। তাঁদের এই কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা গতকাল সকাল থেকে ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে থাকে। গতকাল সকালে গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে দলটি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে মারধর করেন তাঁরা। এ সময় অনেককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জিরো পয়েন্ট থেকে গ্রেপ্তার ৪২ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ। তিনি মামলা বলেন, গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে গ্রেপ্তার ৪২ জনসহ অজ্ঞাত ৩০০ থেকে ৪০০ জন নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সমর্থক, অর্থদাতা, পরামর্শদাতা ও নির্দেশদাতা।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যরা ও তাঁদের অর্থদাতারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কয়েক দিন ধরে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অডিও–ভিডিও ভাইরাল করে। এরপর তাঁরা গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে জিরো পয়েন্ট ও সচিবালয়ের বিপরীত পাশে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য, তাঁদের অর্থদাতা, পরামর্শদাতা একত্র হন। এ সময় ছাত্রলীগের ব্যানারে গ্রেপ্তার ৪২ আসামি দেশবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। তখন জিরো পয়েন্ট ও এর আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রেপ্তার ৪২ জনের মিছিলের স্লোগান শুনে ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আসামিরা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ও সমর্থক। আসামিরা নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থক, অর্থদাতা ও পরামর্শদাতা হিসেবে সক্রিয়ভাবে দেশবিরোধী প্রচারণায় অংশ নেন।
একইভাবে গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনী মার্কেটের সামনে থেকে গ্রেপ্তার ১৩ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল হক। এ মামলায়ও বলা হয়, গ্রেপ্তার ১৩ জন ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ও সমর্থক। তাঁরা পরস্পর যোগসাজশে একত্র হয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট ও বড় ধরনের অঘটন ঘটানোর জন্য সরকারবিরোধী স্লোগান দেয় এবং সমাবেশ আয়োজনের চেষ্টা করে। তাঁরা প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অমান্য করে যেকোনো ধরনের বড় অঘটন ঘটাতে পারে।
গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে মাহাবুব হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী। আর শাহ মো. দোজাহান আলী বেসরকারি ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেও আদালতে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মহিউদ্দিন হোসেন (৩৮), রেহেনা বেগম (৪৫) ও লাকি বেগম (৪৫), ভোলার অহিদুল ইসলাম (২৭), কুমিল্লার ইব্রাহীম মজুমদার (৩৮), উত্তরা পূর্ব এলাকার মাহবুব হাসান (২৮), ঝালকাঠির শহিদুল ইসলাম (৪৫), নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর মোশাররফ হোসেন (৪৫), কামরুল ইসলাম (৪০) ও ফারুক হোসেন (৩৮), শরীয়তপুরের রফিকুল ইসলাম সাগর হাওলাদার (৪৪), আবদুস সালাম আকন (৬২) ও কুদ্দুস মকদুম (৫৩), নোয়াখালীর জিয়া উদ্দিন (৩৬), ইমরান হোসেন (২৫), আবুল বাশার মীর্জা (৪২) ও জাহাঙ্গীর আলম (৩৩), কুমিল্লার ইদ্রিস আহমেদ (৫৪), সাইদুল ইসলাম (৪৫), আবু ইউসুফ (৪৫), আলাউদ্দিন (৫৮) ও মোস্তফা কামাল (৩৪), পটুয়াখালীর আনসার হাওলাদার (৩৫), পল্লবীর ওয়াসীম (৩৫), দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মাসুম (৪৮), নবাবগঞ্জের আলী আহমেদ (৭০), বরিশালের রুবেল (৩৮) ও রাফসান (২৪), গোপালগঞ্জের রাজা (৫৫), গীতা রানী বিশ্বাস (৪২) ও মোহনা আক্তার (২৬), যাত্রাবাড়ীর মুন খাতুন (৫০), মিরপুরের পারভীন সুলতানা (৫০), চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইসমাইল হোসেন (৩৫), হাজারীবাগের কোহিনূর (৩৬), গাজীপুরের পুষ্প (৩৮), নোয়াখালীর নূর উদ্দিন আফসার (৪৭), মানিকগঞ্জের কবির হোসেন (৩৯), শাজাহানপুরের শাজাহান মৃধা (৫০), চাঁদপুরের শাহ মো. দোজাহান সাকলাইন (২৪), জাকির হোসেন (৫০) ও মোশাররফ হোসেন (৩৩), কিশোরগঞ্জের জনি হাসান (২৪), নারায়ণগঞ্জের রাসেল হায়দার (৪২), সূত্রাপুরের ফরহাদ (৪২), কেরানীগঞ্জের পিয়ার আলী (৪২), ভোলার শারমিন আলম আরজু (৪০), ময়মনিসংহের রাকিবুল ইসলাম (২৮) ও মোবাশ্বির রাব্বি (৪০) এবং পাবনার কাউসার হোসেন (৩২)।