সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রায়ই রাজনৈতিকভাবে উসকে দেওয়া হয়: ধর্ম উপদেষ্টা
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতার ঘটনাগুলো বিক্ষিপ্ত এবং এগুলো প্রায়ই রাজনৈতিকভাবে উসকে দেওয়া হয় বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় চার্চ পরিষদ বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আন্তঃধর্মীয় সুধী সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সব ধর্মের নেতাদের অংশগ্রহণে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই সুধী সমাবেশ হয়। ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেসের সেক্রেটারি জেনারেল রেভারেন্ড অধ্যাপক জেরি পিল্লাইয়ের বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে দেশে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতিকে উৎসাহিত করা এবং ধর্মীয় ন্যায্যতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ধর্মীয় সম্প্রীতিসমৃদ্ধ দেশ, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতা, ধর্মের স্বাধীনতা এবং সব নাগরিকের সমান অধিকারকে স্বীকার করে, যা আন্তঃধর্মীয় ঐক্য এবং সামাজিক শান্তির ভিত্তি তৈরি করে।
দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং চব্বিশের জুলাই বিপ্লব ছিল সব ধর্মের মানুষের ন্যায়বিচার, মর্যাদা এবং জাতীয় পরিচয়ের ঐক্যবদ্ধ লড়াই, এসব লড়াইয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল।’
সরকার বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতে কাজ করছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং বৈষম্য নিরোধ করা হয়েছে। এখানে ধর্মীয় উৎসব যেমন ঈদ, দুর্গাপূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা ও ক্রিসমাস জাতীয়ভাবে উৎসাহের সঙ্গে উদ্যাপিত হয়। এ ছাড়া এখানে শিক্ষা ও সচেতনতা, ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে আন্তঃসম্প্রদায়ের উদ্যোগ রয়েছে।
আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, এখানে নানা সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে শক্তিশালী করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির প্রচার, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, শিক্ষা সংস্কার, ঘৃণামূলক অপরাধ এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ এবং সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশ সফররত রেভারেন্ড জেরি পিল্লাইকে বাংলাদেশে স্বাগত জানান। সমাবেশে জেরি পিল্লাই বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার একসঙ্গে, একই এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংঘর্ষ কোনো সমাধান নয়, এর জন্য আলোচনা দরকার এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করতে হবে, সে জন্য ধর্মীয় নেতাদের কাজ করতে হবে।
জেরি পিল্লাই বলেন, বাংলাদেশ একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এখানে রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা সংকট রয়েছে। এ পরিবর্তনের সুফল নিতে হলে ধর্ম ও ধর্মীয় নেতাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ধরে রাখতে হবে। সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ গড়তে হবে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অক্সিলারি বিশপ অব ঢাকা বিশপ ইমেরিটাস থিওটোনিয়াস গমেজ, জাতীয় চার্চ পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি উইং কমান্ডার (অব.) খ্রীষ্টফার অধিকারী, ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেসের প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ দীনেশ সুনা, ন্যাশনাল খ্রীষ্টিয়ান ফেলেশিপ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বিশপ ফিলিপ পি অধিকারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মো. আব্দুল সালাম খান (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ), বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সভাপতি দিব্যেন্দু বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, বাংলাদেশ মেথোডিস্ট চার্চের চেয়ারম্যান বিশপ সাইমন আর বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক দেবাশিস দাস।
বিশ্বের সব প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ ও তার অন্তর্ভুক্ত খ্রিস্টিয়ান সংস্থাগুলোর অন্যতম ‘ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস’ (ডব্লিউসিসি)। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত। জাতীয় চার্চ পরিষদ বাংলাদেশ (এনসিসিবি) এর সক্রিয় সদস্য।