‘অনুমানে’ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরেক শিক্ষকের জিডি

শাহবাগ থানায় এই জিডি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকফাইল ছবি

রিকশায় করে আজিমপুর থেকে সিদ্ধেশ্বরী যাওয়ার পথে শাহবাগ এলাকায় পথরোধ করে অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবকের হুমকি পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। ২৪ জুলাই এই হুমকি পাওয়ার পর এর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকসহ তিনজনকে দায়ী বলে ‘অনুমান’ করে তাঁদের বিরুদ্ধে পরদিন শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ওই শিক্ষক। অভিযোগকারী শিক্ষক ওই জিডি থেকে দুই শিক্ষকসহ তিনজনের নাম প্রত্যাহার করবেন—এমন আশা করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

অভিযোগকারী শিক্ষক হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোনম সাহা। জিডিতে তিনি হুমকির জন্য একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও নাট্যকর্মী ফেরদৌস আরা রুমীকে অভিযুক্ত করেছেন। তাঁদের মধ্যে গীতি আরা নাসরিন ও সামিনা লুৎফা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সক্রিয় সদস্য।

এ ঘটনায় ২৮ জুলাই শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চলমান দমন-পীড়নের মধ্যে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কথায় “সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার” যে ঘোষণা শোনা যাচ্ছে, যাঁর মধ্যে ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ানো শিক্ষকেরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, তার সঙ্গে এই ঘটনার যোগসাজশ থাকতে পারে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়। আমাদের সন্দেহ, ২৪ জুলাই যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ২৮ জুলাইয়ে একটি-দুটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে জাতির কাছে শিক্ষক নেটওয়ার্কের গ্রহণযোগ্যতাকে হেয়প্রতিপন্ন করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমরা এমন হীন চেষ্টাকে ধিক্কার জানাই। আমরা আশা করব, সোনম সাহা তাঁর অভিযোগ থেকে অভিযুক্ত তিনজনের নাম প্রত্যাহার করে বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন।’

হুমকি পাওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে ২৫ জুলাই করা জিডিতে সোনম সাহা বলেন, ‘গত ১৭ জুলাই একটি ঘটনাকে এর কারণ হিসেবে অনুমান করি। ওই দিন ফেসবুকে বিভিন্ন ভুঁইফোড় পেজ থেকে গুজব ছড়ানো হয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পুলিশ গণহত্যা এবং ছাত্রী হলগুলোতে গণধর্ষণ চালাচ্ছে। এই গুজব শুনে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। সরেজমিনে ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ পরিদর্শন করি। আমরা জানতে পারি, ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাস ছাড়ছে। হল ভ্যাকেন্টের পরে ক্যাম্পাস খালি। অল্প কিছু ছাত্রী হলে আছেন, যাঁরা সকালে হল ছেড়ে যাবেন। ক্যাম্পাসে আবাসিক শিক্ষক, তাঁদের পরিবার, পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ এবং গণমাধ্যমকর্মী রয়েছেন। সব মিলিয়ে সারা দিন উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করলেও উল্লিখিত সময়ে ক্যাম্পাস শান্ত, নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ছিল। গণহত্যার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন উল্লেখ করে সোনম সাহা জানান, তাঁর ওই পোস্ট অনেকে শেয়ার করেছেন। জিডিতে সোনম সাহা বলেন, ‘অসংখ্য মানুষ যাঁরা গুজবে আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁরা ওই পোস্ট পড়ে আশ্বস্ত হন। এর ফলে একটি স্বার্থান্বেষী অপরাজনৈতিক মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। শিক্ষক গীতি আরা নাসরিন আমাকে “রেডিও পাকিস্তান, শান্তিবাহিনী”—এসব অভিধা দেন এবং পরোক্ষভাবে আমাকে মিথ্যাবাদী বলেন। শিক্ষক সামিনা লুৎফাও আমার বয়ানকে অনলাইনে অসত্য বলে বয়ান করেন। তাঁদের প্রভাবে সরকারবিরোধী অনেক মানুষ আমাকে ভার্চ্যুয়ালি ও ভার্বালি অ্যাবিউজ করেন, আমাকে কুরুচিপূর্ণ ও বিরূপ মন্তব্য করেন। গীতি আরা নাসরিনের ফেসবুক বন্ধু নাট্যকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী আমাকে এজেন্সির লোক বলে বিপজ্জনক ইঙ্গিত দেন। আমি মনে করি, আমাকে হুমকি দেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টিতে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বা দায় আছে।’
অবশ্য গীতি আরা নাসরিন এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ফেসবুকে আমার একটা পোস্ট আছে, এ ধরনের কিছু একটা লিখেছি। কিন্তু সেখানে কারও নাম উল্লেখ করে এ রকম কিছু লিখিনি। তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না। কাউকে আক্রমণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি, এটা অদ্ভুত কথা। এটা নিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ রকম জিডি করতে পারেন, সেটা আশ্চর্য লাগছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’