অধস্তন আদালতের বিচারকেরা প্রতিটি কর্মস্থলে অনধিক তিন বছর থাকবেন

সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি

অধস্তন আদালতে কর্মরত কোনো বিচারক প্রতিটি কর্মস্থলে অনধিক তিন বছর দায়িত্ব পালন করবেন—এমন বিধান রেখে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালার খসড়া আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এই নীতিমালার বিষয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সব জেলা ও দায়রা জজ/সমপর্যায়ের বিচারকদের মতামত লিখিত আকারে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তর বা ই-মেইল অথবা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ৭ নভেম্বরের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।

গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেন। সেখানে তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। সেদিন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, বিচারকদের পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো ঘোষিত নীতিমালা নেই। ফলে পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেক সময়ই বিচারকেরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এ বিষয়ে একটি যথোপযুক্ত নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন করবেন।

প্রধান বিচারপতির দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ যথাযথভাবে পালনের ক্ষেত্রে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা, ২০২৪ (খসড়া) প্রস্তুত করা হয়েছে। নীতিমালার বিষয়ে মতামত লিখিত আকারে জানাতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আজিজ আহমদ ভূঞার আজ সই করা এক স্মারকে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। স্মারকসহ নীতিমালা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

খসড়া নীতিমালার অংশবিশেষ

‘বিচারকদের পদায়নের সাধারণ মেয়াদ’ বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়, অধস্তন আদালতে কর্মরত কোনো বিচারক প্রতিটি কর্মস্থলে অনধিক তিন বছর দায়িত্ব পালন করবেন। তবে যদি প্রধান বিচারপতির কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো বিচারক কোনো বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন বা কোনো বিচারক বদলি হলে বিচার প্রশাসনে ব্যাঘাত সৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে ওই বিচারক অনধিক আরও এক বছর ওই কর্মস্থলে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আর চৌকি আদালতে কর্মরত বিচারকের পদায়নের মেয়াদকাল হবে সর্বোচ্চ এক বছর।

কোনো ধরনের ব্যতিক্রম ছাড়া অধস্তন আদালতের বিচারকদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে পালাক্রমে বদলি করতে হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। একই কর্মস্থলে পুনঃপুন বদলি বারিত করার বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়, কোনো কর্মস্থলে একজন বিচারককে একাদিক্রমে দুবার বদলি বা পদায়ন করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে কোনো বিচারক বদলিসূত্রে কোনো কর্মস্থলে যোগদান করার ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার আগে ওই বিচারক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হলে তাঁর বর্তমান কর্মস্থলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে তাঁকে পদায়ন করা যাবে। পুরো চাকরিজীবনে একজন বিচারককে একই কর্মস্থলে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট জেলায় তিনবারের অধিক বদলি বা পদায়ন করা যাবে না বলেও খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।

বিচারকদের বদলির ক্ষেত্রে অনুসরণীয় সাধারণ নীতি সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়, শূন্য পদ ছাড়া কোনো বিচারককে বদলি করা যাবে না। কোনো বিচারককে এমন কোনো কর্মস্থলে বদলি করা যাবে না, যেখানে তাঁর পরিবারের (স্বামী/ স্ত্রী, পিতা, মাতা, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাই, বোন, পিতামহ, মাতামহ) আইনজীবী পেশায় নিযুক্ত রয়েছেন। কোনো বিচারক যে জেলায় ক্রয়সূত্রে ১০ শতাংশের বেশি কৃষি বা অকৃষি ভূমির মালিক, সে জেলায় পদায়ন লাভ করতে পারবেন না। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রী বিচারক হলে একই কর্মস্থলে বদলির অগ্রাধিকার পাবেন, বছরের নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বদলি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে এবং অধস্তন আদালতের কোনো বিচারকের প্রেষণের মেয়াদ অনধিক তিন বছর হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।