দোষ কি শুধু বাণিজ্যমন্ত্রীর, অন্য মন্ত্রীদের দায় নেই

দেশে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যে ডিমের দাম হালিপ্রতি ২৮ থেকে ৩০ টাকা ছিল, তা এখন ৫০-৫৫ টাকা। মোটা চালের কেজি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ছিল ৩০-৩৫ টাকা, এখন তা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। চিনির কেজিপ্রতি দাম উঠেছে ১৪০-১৪৫ টাকায়।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদে, সংসদের বাইরে—দ্রব্যমূল্য নিয়ে সমালোচনার তির বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির দিকে। এ যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতা, ‘যা–কিছু হারায়, গিন্নি বলেন, “কেষ্ট বেটাই চোর।”’

বাণিজ্যমন্ত্রীকে নন্দ ঘোষের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। ঘোষপল্লিতে দুরন্ত কৃষ্ণ যা কিছু করতেন, তার দোষ গিয়ে পড়ত নন্দ ঘোষের ওপর। কৃষ্ণকে পুত্রস্নেহে লালন–পালনকারী নন্দ ঘোষ সব দোষ মাথা পেতে নিতেন।

‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতায় যিনি ‘গিন্নি’র ভূমিকায়, জাতীয় সংসদে তাঁরা বিরোধী দলের ভূমিকায়। পার্থক্য হলো, তাঁরা সবকিছু হারালে প্রশ্ন তোলেন না। তুললেও রয়েসয়ে। আঘাতটা সরাসরি সরকারি দলের ওপর গিয়ে পড়ে, এমন বিষয় তাঁরা ঘাঁটান না। ঘাটালেও নাম নেন না। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীকে ১৪ সেপ্টেম্বর তুলোধুনো করেছেন বিরোধী সংসদ সদস্যদের কয়েকজন।

বাণিজ্যমন্ত্রীকে ‘সিন্ডিকেটের হোতা’ বলা হয়, তিনি ব্যবসায়ী, ব্যবসা ভালো বোঝেন—এসব কথাও স্মরণ করিয়ে দেন সংসদ সদস্যরা। জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি ব্যবসা শুরুর ২০ বছর আগে রাজনীতি শুরু করেছেন। ব্যবসা না করলে তাঁকে চাঁদা নিয়ে চলতে হতো। আর তাঁর ব্যবসা রপ্তানিমুখী।

এসব তর্কবিতর্ক পার হয়ে পাঠকের জানা দরকার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ কী কী, তার জন্য আর কোনো মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর দায় আছে কি না।

ডিমের দামের দায় কার

ডিম ও মুরগির দামের ক্ষেত্রে বাণিজ্যমন্ত্রীর কোনো ভূমিকা নেই। ডিমের উৎপাদন বাড়ানো ও আমদানির ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ওপর। ডিমের দাম ইতিহাসে সর্বোচ্চ হলেও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বারবার বলে এসেছেন, দেশে ডিমের কোনো সংকট নেই।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, যাঁদের দায়িত্ব উৎপাদন বাড়ানো, তাঁরাই আবার হিসাবের দায়িত্বে। ফলে সে হিসাব কেমন হয়, সেটা সবার জানা।

ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে ভুল নীতি নিয়েছে। চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দাম যখন ডলারের বিপরীতে অবমূল্যায়ন হয়েছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার মান ধরে রেখেছে। সেটা ছিল কৃত্রিম।

দেশীয় খামারিদের সুরক্ষা দিতে সরকার ডিম, মুরগি ও গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করে রেখেছে। এ সুযোগে ‘বড়রা’ ইচ্ছেমতো মুনাফা করার সুযোগ পাচ্ছেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে যে ডিমের দাম হালিপ্রতি ২৮ থেকে ৩০ টাকা ছিল, তা এখন ৫০-৫৫ টাকা। যে ব্রয়লার মুরগি ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা ছিল, তা এখন ১৭০ টাকার নিচে নামছে না। ২৫০ টাকায়ও উঠেছিল।

গরুর মাংসের দাম ছিল ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা। তা এখন বাড়তে বাড়তে ৭৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। কোথাও কোথাও কেজিপ্রতি দর ৮০০ টাকা।

প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম
ফাইল ছবি

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ডিম ও গরুর মাংস আমদানি করতে ব্যবসায়ীরা আবেদন করেছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মতামত চেয়েছিল প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু প্রাণিসম্পদ সাড়া দেয়নি। আমদানিও হয়নি, দামও কমেনি।

উল্টো সরকার খুঁজেছে ‘সিন্ডিকেট’। বাজারে অভিযান চলেছে। কাজ হয়নি। দোষাদোষির একপর্যায়ে একটি ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানায়, ডিমের উৎপাদন কম। তাই দাম বাড়তি।

জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব হলো দেশের খামারিদের সুরক্ষা দেওয়া এবং ভোক্তার স্বার্থ দেখা। এ ক্ষেত্রে কী নীতি অনুসরণ করতে হবে, তা বাজারবিশ্লেষকেরা প্রায়ই উল্লেখ করেন। সেটি হলো, একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সুরক্ষা দিয়ে আমদানি উন্মুক্ত রাখা, যাতে ভোক্তাও মোটামুটি সাশ্রয়ী দামে কিনতে পারেন, খামারিরাও লাভ করতে পারেন।

ধরা যাক, বাংলাদেশে কোনো পণ্যের উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। আমদানি করলে খরচ হবে ৮০ টাকা। এমন হলে দেশীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতে এমনভাবে মোট শুল্ককর নির্ধারণ করতে হয়, যাতে দেশীয় উৎপাদন খরচের চেয়ে আমদানির ব্যয় বেশি হয়। এতে কোনো কারণে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়ালে আমদানির সুযোগ তৈরি হয়।

ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হলেও সেই দামে কিনতে পারছে না ভোক্তা
ফাইল ছবি

বাজার নিয়ন্ত্রণের এটাই স্বতঃসিদ্ধ কৌশল। তার বদলে আমদানি পুরো বন্ধ করে রেখে ‘বড়দের’ মুনাফা করার সুযোগ দিয়ে, সস্তার আমিষ স্বল্প আয়ের মানুষের নাগাল ছাড়া করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কার পক্ষ নিল?

সর্বশেষ খবর হলো, সরকার কিছু ডিম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিমাণ ১০ কোটি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেটা এত দিন পরে কেন? ডিমের দাম তো বছরখানেক ধরেই চড়া। আর প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণের যুক্তি কী, যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রায় অর্ধেক দরে ডিম বিক্রি হয়।

তেল-চিনি

ভোজ্যতেল ও চিনির দাম নিয়মিত পর্যালোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেল। তাদের পর্যালোচনার ভিত্তিতে দাম ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে চিনির নির্ধারিত দর মানা হচ্ছে না। এ দায় পুরোটাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের, মন্ত্রীর।

কিন্তু চিনির দামের আরেকটি দিকও রয়েছে। বিশ্ববাজারে এখন পণ্যটির দাম সর্বোচ্চ। দেশের বাজারে চিনির কেজি উঠেছে ১৪০-১৪৫ টাকায়। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা হয় না, সেটি হলো চিনির ওপর উচ্চ শুল্ককর। পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক–কর ভার ৬৭ শতাংশ আর অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক-কর ভার ৬২ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, প্রতি কেজি চিনির ওপর শুল্ককর দাঁড়ায় ৪০ টাকার বেশি। আর সয়াবিন তেলে তা ২২ টাকার আশপাশে। শুল্ক কমানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। এনবিআর বছরের শুরুর দিকে তেল-চিনিতে শুল্ককরে কিছুটা ছাড় দিয়েছিল। গত মে মাসে এটি তুলে নেওয়া হয়।

বিশ্ববাজারে তেল-চিনির দাম বাড়লে বরং সরকারেরই লাভ। কারণ, তাতে রাজস্ব বাড়ে। রাজস্ব আদায়ে মরিয়া এনবিআর তাই করছাড়ে মোটেও আগ্রহী নয়। এনবিআর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। চিনির মতো নিত্যপণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ককর বসিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কি অর্থমন্ত্রীর দায় নেই?

চাল ও আটা

চাল ও আটার বাজারের নিয়ন্ত্রণ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে। দুইভাবে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে—১. খোলাবাজারে কম দামে বিক্রির মাধ্যমে। ২. আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়ে। চাল ও আটার দাম এখন উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল আছে। কিন্তু এর আগে যথাসময়ে আমদানি করতে না পারায়, যথাসময়ে শুল্ক না কমানোয় বাজারদর বেড়ে গেছে।

কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক
ফাইল ছবি

কৃষি মন্ত্রণালয় আবার চাল আমদানির বিরুদ্ধে। তাদের বিশ্লেষণ হলো, দেশে উৎপাদন যথেষ্ট। আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাজারের বাস্তবতা ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য হলো, উৎপাদন ও চাহিদার হিসাবে কোথাও গরমিল আছে। উৎপাদনের পরিসংখ্যানও দেরিতে আসে। গত বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন কত হয়েছিল, তা এখন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

নওগাঁয় আউশ ধানের খেত পরিদর্শন করছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার
ফাইল ছবি

মনে রাখা দরকার, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে মোটা চালের কেজিপ্রতি দর ছিল ৩০-৩৫ টাকা। এখন তা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। যে সরু চাল কেজিপ্রতি ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত, এখন তা কিনতে হয় ৬৫ টাকায়।

যথাসময়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নিতে না পারা, উদ্যোগে অসম্মতি ও যথাসময়ে উৎপাদনের গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যান দিতে না পারার ফলে দাম যে বেড়ে যায়, তার দায় কি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ওপর বর্তায়?

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
ফাইল ছবি

জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ

২০২২ সালের আগস্ট মাসে ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বেড়েছিল কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দামও। পরে সমালোচনার মুখে লিটারপ্রতি দাম ৫ টাকা কমানো হয়।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ যেকোনো পণ্য পরিবহনে পরিবহনভাড়া বেড়ে যাওয়া। পরিবহনভাড়া বেড়েছে ডিজেলের দামের কারণে। যে মাসে ডিজেলের দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছিল, সে মাসেই মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

সরকার সাধারণত ডিজেল ও কেরোসিন ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করে। এখন ভর্তুকি নেই। বরং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) লাভ করছে। আর তেল-চিনির মতো জ্বালানি তেলও এখন সরকারের রাজস্ব আয়ের বড় উৎস। এক লিটার ডিজেল থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শুল্ককর বাবদ আয় দাঁড়ায় ৩০ টাকার আশপাশে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ
ফাইল ছবি

বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। গত জানুয়ারি মাসে জ্বালানি মন্ত্রণালয় গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ায়। শিল্প খাতে বাড়ানো হয় ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ। এই মূল্যবৃদ্ধি উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি উসকে দিয়েছে। এর জন্য কি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে দায় দেওয়া উচিত?

রান্নার জ্বালানি বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় প্রতি মাসে। কোনো মাসেই তা মানা হয় না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কি এই দায় নেবে?

ডলারের দাম

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বেশি দায়ী ডলারের দাম। গত বছর মে মাসে যে ডলার ৮৬ টাকা ছিল, তা এখন ১১০ টাকা। মানে হলো, যা কিছু বিদেশ থেকে আমদানি করেন না কেন, প্রায় ২৮ শতাংশ বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে মার্কিন ডলারের দামের কারণে।

সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, দেশের অর্থনীতি ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। আর নিজেদের জীবনে দ্রব্যমূল্যের আঘাত মারাত্মকভাবে পড়ার কথা বলেছেন ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা।

ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে ভুল নীতি নিয়েছে। চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দাম যখন ডলারের বিপরীতে অবমূল্যায়ন হয়েছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার মান ধরে রেখেছে। সেটা ছিল কৃত্রিম। এর ফলে সরকারের লাভ হয়েছে—মাথাপিছু আয়, মাথাপিছু জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ইত্যাদি বেশি দেখানো গেছে। কিন্তু আমদানি উৎসাহিত হয়েছে, রপ্তানি নিরুৎসাহিত হয়েছে। সংকট যখন শুরু হলো, তখন হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়তে শুরু করল। সেটায় এখনো লাগাম টানা যায়নি, বরং পুরো অর্থনীতি এখন সংকটে পড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ গভর্নর ছিলেন সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবির
ছবি: ডেইলি স্টারের সৌজন্যে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ গভর্নর ছিলেন সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবির। ব্যাংকে নানা কেলেঙ্কারি ঠেকাতে সফল না হলেও আইন সংশোধন করে তাঁকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য গভর্নর বানিয়েছিল সরকার। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দায় দেওয়ার সময় সাবেক গভর্নরের নামটিও কি আসবে?

কে শোনে কার কথা

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির পক্ষে, বিরোধিতা প্রাণিসম্পদের। খাদ্য মন্ত্রণালয় আমদানির পক্ষে, বিরোধিতা কৃষি মন্ত্রণালয়ের। ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করে শুল্ক কমানোর, বিরোধিতা এনবিআরের। জ্বালানি মন্ত্রণালয় চায় ডিজেলে শুল্কছাড়, তা দিতে চায় না এনবিআর।

বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই যখন পরিস্থিতি, তখন দরকার ছিল সমন্বিত সিদ্ধান্ত, অর্থনৈতিক নেতৃত্ব। সেটা যে অনেকটা অনুপস্থিত, তা দেখা গেল। কিন্তু নিজেদের স্বার্থের বেলায় সরকারের কৃচ্ছ্রর মধ্যেও গাড়ি কেনার ব্যয়সীমা ৯৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করে নিতে সময় লাগল না।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য নীতিনির্ধারকেরা অব্যাহতভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করেছেন। এখনো করছেন। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলেও দেশে কেন কমছে না, সেটা বলছেন না।

যথাসময়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নিতে না পারা, উদ্যোগে অসম্মতি ও যথাসময়ে উৎপাদনের গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যান দিতে না পারার ফলে দাম যে বেড়ে যায়, তার দায় কি খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর ওপর বর্তায়?

দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে, দেশের অর্থনীতি ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। আর নিজেদের জীবনে দ্রব্যমূল্যের আঘাত মারাত্মকভাবে পড়ার কথা বলেছেন ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা।

সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা যদি জনগণের পাশে না থাকেন তাহলে তাঁদের সমস্যাগুলো পরে সমাধান হয়, কখনো কখনো হয় না। তাঁদের এবং তাঁদের আশপাশে থাকা গুটিকয়েক মানুষের সুবিধাই আগে দেখা হয়।

এ কারণেই কৃচ্ছ্রতার সময়ে সরকারি গাড়ি কেনার ব্যয়সীমা বেড়ে যায়। নতুন গাড়িও কেনা হয়। পদ না থাকলেও প্রয়োজনহীন পদোন্নতি হয়। কিন্তু তেল–চিনিতে ওপর শুল্ককর কমে না।