পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসছে
পিডিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে আজ।
লোডশেডিং অনেকটাই কমে আসায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রক এই সংস্থার কাছে গত জানুয়ারি মাসে দাম বাড়ানোর আবেদন করেছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তখন সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল তারা। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এক মাসের মাথায় আপিল করে পিডিবি। এই আবেদন বিইআরসি বিবেচনায় নিয়ে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে আজ সোমবার।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করবে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে আজ দুপুরে অনলাইন সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিইআরসি। এর আগে ১৩ নভেম্বর রিভিউ (পুনরায়) আবেদন করে পিডিবি। সেই আবেদনের সঙ্গে দাম বাড়ানো নিয়ে বিইআরসির আপত্তি করা তিনটি বিষয়েরও ব্যাখ্যা দিয়েছে তারা। এ ব্যাখ্যা আমলে নিয়ে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রথমে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর পিডিবি সেই বিদ্যুৎ পাইকারি মূল্যে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে। পরে বিতরণ কোম্পানিগুলো খুচরা মূল্যে গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়।
বিইআরসির সদস্য বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। আইনি প্রক্রিয়া মেনেই কমিশন সোমবার (আজ) সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর আবেদনের ওপর নতুন করে শুনানির প্রয়োজন নেই।
এখন শীতের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমায় লোডশেডিং বন্ধ হওয়ার সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এটা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার শামিল
অবশ্য কী পরিমাণ দাম বাড়বে, তা বলতে রাজি হননি বজলুর রহমান। শুধু বলেছেন, পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এলে তা বিবেচনা করে দেখবে কমিশন।
এভাবে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পিডিবি যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে না পারায় দাম বাড়ায়নি বিইআরসি। এখন পিডিবি যে ব্যাখ্যা দিয়েছে; তা নিয়ে ক্যাব ও অন্য পক্ষের বক্তব্য শুনতে হবে। তাই পুনরায় শুনানি ছাড়া দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।
বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। এর বাইরে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকেও আর্থিক সহায়তা নিচ্ছে সরকার। এসব সংস্থা ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। তাই এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
গত ১২ জানুয়ারি পাইকারি বিদ্যুতের গড়ে ৬৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করে পিডিবি। তথ্যের অসম্পূর্ণতা থাকায় তা আমলে না নিয়ে পুনরায় আবেদন করার নির্দেশনা দেয় বিইআরসি। এরপর পুনরায় আবেদন জমা দিলে তা নিয়ে গত ১৮ মে শুনানির আয়োজন করা হয়। এতে ভর্তুকি ছাড়া ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তবে ক্যাব ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন শুনানিতে। বিদ্যুৎ খাতের অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, অনিয়ম নিয়েও নানা প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
এরপর গত ১৩ অক্টোবর দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি। তখন বলা হয়, ভোক্তার ওপর দাম বাড়ানোর প্রভাব কী হবে; এর কোনো মূল্যায়ন করেনি তারা। বারবার চাইলেও যথাযথ তথ্য জমা দেয়নি তারা। তথ্যের অস্বচ্ছতার কারণে পিডিবির তথ্য-উপাত্ত যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা যায়নি। কোনো পক্ষের আপত্তি থাকলে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করার কথাও বলা হয় আদেশে।
গত এক যুগে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। সবশেষ দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর হয়। তখন পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়ানো হয় দাম। একই সময়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সরকার ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে। দেশে ওই সময় চরম লোডশেডিং চলছিল। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। এখন শীতের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমায় লোডশেডিং বন্ধ হওয়ার সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এটা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার শামিল।