আন্তর্জাতিক সংগঠনের যৌথ বিবৃতি
পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান
পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপর সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে দুই আন্তর্জাতিক সংগঠন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) কমিশন। এ নিয়ে মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
সিএইচটি কমিশন ছাড়া অন্য দুই আন্তর্জাতিক সংগঠন হলো ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ক গ্রুপ ফর ইন্ডিজেনাস অ্যাফেয়ার্স (আইডব্লিউজিআইএ) এবং এশিয়া ইন্ডিজেনাস পিপলস প্যাক্ট (এআইপিপি)। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় এবং পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর হামলা হয়। এসব হামলায় রাঙামাটিতে একজন ও খাগড়াছড়িতে তিনজন নিহত হন। পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হয়। মোটরসাইকেল চুরির চেষ্টার অভিযোগে দলবদ্ধভাবে একজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার জেরে এসব হামলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব ঘটনার পর ১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যাকে কেন্দ্র করে আবারও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে পাহাড়িদের ওপর হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব সহিংসতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
দলবদ্ধ সহিংসতার (মব ভায়োলেন্স) ঘটনা শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামেই ঘটছে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশজুড়ে উদ্বেগজনকভাবে দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের আর কোথাও এসব সহিংসতার জেরে কোনো একটি জনগোষ্ঠীর ওপর আরেকটি জনগোষ্ঠীর হামলার ঘটনা দেখা যায়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় সহিংসতার ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে এই কমিটির ওপর আমাদের তেমন আস্থা নেই। অতীতেও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা আমরা ঘটতে দেখেছি। প্রতিবারই এ ধরনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো কমিটিই ন্যায়বিচার আনতে পারেনি অথবা তদন্ত করে তারা কী পেল, সেটা প্রকাশ করতে পারেনি।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অর্থবহ পদক্ষেপ, দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা ও গণতান্ত্রিক আলোচনার মধ্য দিয়েই কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি। সামরিক কায়দায় এর সমাধান সম্ভব নয়। এর পরিবর্তে আমাদের এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে সব অংশীজনের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা ও সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি হয়। সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় অগ্রাধিকার ও সংঘাতের মূল কারণ খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমেই কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।’