পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করার তাগিদ
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ন করতে বলেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি। আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দ্রুত এই বিধিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার ব্যাপারে বৈঠকে একমত পোষণ করা হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদা) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এতে অংশ নেন কমিটির সদস্য জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এ ছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা এই বৈঠকে অংশ নেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী, ওই অঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে প্রথম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালা চূড়ান্ত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এই বিধিমালা প্রণয়ন করা গুরুত্বপূর্ণ বলে বলে আসছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিটির আগের বৈঠকেও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে একটি প্রস্তাব তৈরি করতে বলা হয়েছিল। এ–সংক্রান্ত একটি খসড়া কমিটিতে দেওয়া হয়েছে। গতকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এই বিধিমালা প্রণয়নের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে পার্বত্য অঞ্চলের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশেষ করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। এই সংগঠন নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বৈঠকে তুলে ধরা হয়। সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে তাদের কঠোরভাবে দমন করতে বলেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি। এ ছাড়া কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে কুকি-চিনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয়। ফলে আলোচনা নয়, তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, তিন পার্বত্য জেলার সরকারি দপ্তরগুলো পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরের কাজ এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে ৩০টি দপ্তর, খাগড়াছড়িতে ২৯টি ও বান্দরবানে ২৮টি দপ্তর ও বিভাগ হস্তান্তরিত হয়েছে। সভায় পার্বত্য অঞ্চলের সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার করা ২৪০টি ক্যাম্পের মধ্যে ৩০টি ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েন করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠক শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কুকি–চিনের বিরুদ্ধে যেকোনো মূল্যে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তারা পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে।