প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংসদ ভবনে হাজারো মানুষ, লুটের চেষ্টা
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ ভেতরে প্রবেশ করেছেন। বিক্ষুব্ধদের কেউ কেউ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করছেন। অনেকে আবার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকেছেন কেউ কেউ। এসব গ্রাফিতিতে লেখা ছিল, ‘হাসিনা পালাইছে’, ‘লিবারেশন ওয়ার ২০২৪’, ‘বিজয়’, ‘খুনি হাসিনা’ প্রভৃতি।
বিভিন্ন ব্যক্তি যেসব সরঞ্জাম নিয়ে যেতে চাইছিলেন, তাঁদের অনেকের কাছ থেকে সেসব সরঞ্জাম উদ্ধার করেন ছাত্ররা। তাঁরা সেগুলো এক জায়গায় জড়ো করেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে বিভিন্ন আসবাব ছাড়াও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ও বইপত্রসহ নানা জিনিস ছিল।
সরঞ্জামাদি উদ্ধারে যেসব ছাত্র কাজ করছিলেন, তাঁদের একজন সরকারি তিতুমীর কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন জনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকেই এখান থেকে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি নিয়ে যাচ্ছিলেন। কেউ বলছিলেন, তাঁরা স্মৃতি হিসেবে নিচ্ছেন। তবে যেহেতু এগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ, তাই এসব সম্পদ ও তথ্য যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য আমরা কাউকে কিছু নিতে দিচ্ছি না।’
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী হালিমা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৪ ঘণ্টা ধরে উৎসুক মানুষের থেকে সব সরঞ্জামাদি নিয়ে জমা করেছি। এগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মো. কামাল হোসেন নামের এক কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে একটি স্টোর রুমে রেখেছি।’
সংসদ ভবনের চিত্র
বিকেল পাঁচটার দিকে সংসদ ভবন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ সংসদ ভবনের আঙিনায় প্রবেশ করেছেন। প্রায় প্রতিটি কক্ষ, বাসভবন ও স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয়েছে। কেউ কেউ বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রী থেকে শুরু করে হাতে সামনে যা পাচ্ছিলেন নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৮০–১০০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল তাঁদের থামাচ্ছিলেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ না নিতে অনুরোধ করছিলেন। এ সময় ‘রাষ্ট্রের সম্পদ সবার’ এমন যুক্তি দেখিয়ে কেউ কেউ তাঁদের সঙ্গে তর্কেও জড়িয়ে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীদের কড়া প্রতিবাদের মুখে সবাই জিনিসপত্র রেখে যেতে বাধ্য হন।
সেখানে কাজ করছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের ছাত্রী রওনক ফাতেমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জীবন দিয়েছি রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য। এই জিনিসপত্রগুলো তো আমাদের টাকাতেই কেনা। এখন এগুলো ভাঙচুর করা হলে তো আমাদেরই ক্ষতি। পরে আবার আমাদের টাকাতেই কিনতে হবে। এ জন্য আমরা কাউকে কিছু নিতে দিচ্ছি না। এগুলো আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়ে যাব।’