ভিকারুননিসা নূন স্কুল
স্থিতাবস্থা: ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে আপাতত ভর্তি নয়
বয়সসীমা লঙ্ঘিত হওয়ায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি বাতিল করা ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে এ–সংক্রান্ত রুল দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। ভর্তি বাতিল হওয়া ৩৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা এক আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
ভর্তি বাতিল হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিলেন ওই অভিভাবকেরা।
আদেশের পর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্ট ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পক্ষগুলোকে অর্থাৎ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে এ–সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। ফলে ইতিমধ্যে ভর্তি বাতিল হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থী ভিকারুননিসা নূন স্কুলে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। পাশাপাশি ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে আপাতত শিক্ষার্থীও ভর্তি করা যাবে না।’
এক রিটের ধারাবাহিকতায় ৬ মার্চ হাইকোর্ট এক আদেশে ভর্তি বাতিল হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মাউশিকে নির্দেশ দেন। ভর্তি বাতিল করা ১৬৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষভুক্ত (রিটে) হওয়ার আবেদন সেদিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।
এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ৩৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবক আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যা ১৮ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ২০ মার্চ শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।
আদালতে ৩৬শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামীম সরদার। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম শুনানিতে ছিলেন।
ঘটনার পূর্বাপর
নথিপত্র থেকে জানা যায়, নির্দিষ্ট বয়সসীমার বাইরে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে অভিযোগ তুলে ভর্তিসংক্রান্ত নীতিমালা এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তিতে প্রথম শ্রেণিতে বয়সসীমা–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি নিয়ে লটারিতে উত্তীর্ণ প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি একটি রিট করেন। শুনানি নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এর আগে জাতীয় শিক্ষানীতি–২০১০ ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সসীমা অনুসরণ না করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ফল বাতিল বিষয়ে রিট আবেদনকারীদের একজন (পারভিন আকতার) গত ১৭ জানুয়ারি মাউশির মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন। হাইকোর্ট এই আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।
রিট আবেদনকারীর মাউশিতে করা আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। একই সঙ্গে ভিকারুননিসার ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে নির্দেশনা সংবলিত মাউশির মহাপরিচালকের এক চিঠি (স্মারক) তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ। স্মারকের ভাষ্য, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য। চারটি শাখা মিলিয়ে ২০১৫ সালে জন্ম এমন ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্ম ১৫৯ জন এবং ২০১৮ সালে জন্ম এমন ৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
ওই স্মারকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূত (২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মগ্রহণকারী) ভর্তি করা (২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৫৯ জনসহ মোট ১৬৯ জন) শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করে জরুরিভিত্তিতে মাউশিকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়।
শুনানি নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মাউশির ওই সিদ্ধান্ত (স্মারক) বাস্তবায়ন (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে হলফনামা আকারে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে ৬ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। ধার্য তারিখে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের পক্ষে হলফনামা আকারে কমপ্লায়েন্স (বাস্তবায়ন) প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।
এই প্রতিবেদনের ভাষ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারটি শাখায় প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক স্মারকে মাউশি নির্দেশনা দেয়। মাউশির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে মাউশিতে ৪ মার্চ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শুনানি নিয়ে ৬ মার্চ হাইকোর্ট ১৬৯টি শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে প্রথম শ্রেণিতে এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে নির্দেশ দেন। শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পুরো অপেক্ষমাণ তালিকা হলফনামা আকারে (কমপ্লায়েন্স) দাখিল করতে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ভর্তি বাতিল হওয়া ৩৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এ অবস্থায় হাইকোর্টের ৬ মার্চের আদেশ স্থগিত চেয়ে ৩৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবক আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যার ওপর শুনানি নিয়ে আদালত আজ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিলেন।