মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক আবার বাড়তে শুরু করেছে
টানা পাঁচ মাস মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক কমার পর ফেব্রুয়ারিতে ১১ লাখের বেশি গ্রাহক বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে এই গ্রাহক বাড়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। অন্যদিকে ছয় মাস পর মুঠোফোন উৎপাদন কমে ২০ লাখের নিচে নেমেছে।
আজ রোববার বিটিআরসি ইন্টারনেট ও মুঠোফোন গ্রাহক সংখ্যার সর্বশেষ তথ্য দিয়েছে। তাতে দেখা যায়, দেশে এখন মোট ইন্টারনেট গ্রাহক ১৩ কোটির বেশি। এতে ফেব্রুয়ারিতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক ১ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি, যা জানুয়ারি মাসেও একই ছিল। মূলত বেড়েছে মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক।
দেশে এখন মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। জানুয়ারি মাসের চেয়ে এই সময়ে গ্রাহক বেড়েছে ১১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। এর আগের টানা পাঁচ মাস মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক কমায় পুরো ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যার ওপর প্রভাব পড়েছিল। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসেই প্রায় ২২ লাখ মুঠোফোন ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছিল।
ইন্টারনেট গ্রাহক কমে যাওয়ার পেছনে অপারেটররা তিন দিনের জনপ্রিয় প্যাকেজ বন্ধ হয়ে যাওয়া, একাধিক সিমের ব্যবহার করে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছিল। এ ছাড়া বছরের শেষ দিকে এসে গ্রাহক কম থাকে বলেও জানিয়েছিল তারা। তবে আবারও গ্রাহক বাড়তে শুরু করেছে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে মুঠোফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৯ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। উল্লেখ্য, বিটিআরসির হিসাবে সর্বশেষ ৯০ দিনে কোনো ব্যক্তি একবার ব্যবহার করলেই ইন্টারনেট ও মুঠোফোন গ্রাহক হিসেবে গণ্য হন।
৩ মার্চ বিটিআরসি স্থানীয়ভাবে মুঠোফোন উৎপাদনের সর্বশেষ তথ্য দিয়েছে। তাতে দেখা যায়, দেশে উৎপাদিত মুঠোফোনের সংখ্যা কমছে। গত ৬ মাস পর মুঠোফোনের উৎপাদন কমে ২০ লাখের নিচে নেমেছে। উৎপাদনকারীরা বলছেন, অর্থনৈতিক অবস্থা ও অবৈধ বাজারের কারণে চাহিদা কম, তাই কম উৎপাদন হচ্ছে।
বাংলাদেশে এখন ১৭টি প্রতিষ্ঠান মুঠোফোন উৎপাদন করে থাকে। দেশে যে পরিমাণ চাহিদা তার প্রায় ৯০ শতাংশই এই উৎপাদনকারীরা মেটাতে পারেন বলে দাবি তাঁদের। ২০১৭ সালে উৎপাদনের অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে শুরুতে ভালো অবস্থা থাকলেও এখন উৎপাদন কমতির দিকেই।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে ১৮ লাখ ৯২ হাজার মুঠোফোন উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার টু–জি ফোন। ফোর–জি ফোনের উৎপাদনের পরিমাণ সাড়ে তিন লাখের বেশি। আর ফাইভ–জি ফোনের উৎপাদন শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশের কিছু বেশি। গত বছরের জুন মাসের পর থেকে মুঠোফোন উৎপাদন ২১ থেকে ২৪ লাখের মধ্যে ছিল।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে মুঠোফোন আমদানি হয় ৫ হাজার ৫০টি। এগুলো সবই ফাইভ–জি ফোন।
মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, মুঠোফোনের অবৈধ বাজারের কারণে তাদের ব্যবসার ওপর প্রভাব পড়ছে।
মুঠোফোন উৎপাদন কমার আরও কিছু কারণ হিসেবে এমআইওবি জাকারিয়া শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকের চাহিদাই কমেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মানুষ একদম প্রয়োজনের বাইরে কিছু কেনা কমিয়েছে। এ ছাড়া নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাহিদা কম থাকে। ঈদের মৌসুম চলছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।