সেই শামীমকে দুজনকে হত্যাচেষ্টা ও জখমের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো
চট্টগ্রাম নগরের খুলশীতে ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করা শামীম আজাদ ওরফে ব্ল্যাক শামীমকে দুই ব্যক্তিকে হত্যার চেষ্টা ও জখমের মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখানো হয়েছে। আজ সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেব পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
জাতীয় নির্বাচনের পরদিন ৮ জানুয়ারি সীতাকুণ্ড থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তখন সীতাকুণ্ড থানায় অস্ত্র আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল র্যাব।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী নুরে খোদা প্রথম আলোকে বলেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন চট্টগ্রাম-১০ আসনের খুলশীর পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রে নৌকা ও ফুলকপি প্রতীকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় শামীম আজাদকে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় শান্ত বড়ুয়া (৩০) ও মো. জামাল (৩২) নামের দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আসনটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়েন মো. মহিউদ্দিন (বাচ্চু)। ফুলকপি প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। নির্বাচনে জয়ী হন মহিউদ্দিন বাচ্চু।
গ্রেপ্তার শামীম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নগর যুবলীগের সহসভাপতি ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন।
ভোটকেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জামালের স্ত্রী হাজেরা বেগম বাদী হয়ে ঘটনার দিন ৭ জানুয়ারি রাতে খুলশী থানায় মামলা করেন। এতে শামীমকে এক নম্বর আসামি করা হয়। বাকি ছয় আসামি হলেন ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী রোমানা চৌধুরী, ওয়াসিমের অনুসারী কাজী কাউসার, মো. সুমন ও মো. পারভেজ। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয় এ মামলায়।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ জামালের স্ত্রী হাজেরা বেগমের করা হত্যাচেষ্টা ও জখমের মামলায় কারাগারে যাওয়া শামীমকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য গত বৃহস্পতিবার খুলশী থানার পুলিশ আদালতে আবেদন করে। পরে আদালত সোমবার শুনানির দিন ধার্য করেন। শুনানি শেষে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন আদালত।
শামীমের বিরুদ্ধে যত মামলা
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তার শামীম মিরসরাইয়ের স্থায়ী বাসিন্দা। বর্তমানে নগরের খুলশীতে বসবাস করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চাঁদাবাজি, দরপত্র ছিনতাই, অস্ত্রবাজি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করে আসছেন। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে শামীম অস্ত্র দেখিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং বাধা দেন। একপর্যায়ে গুলিবর্ষণ করলে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর বিরুদ্ধে নগর ও জেলায় হত্যা, চাঁদাবাজির পাঁচটি মামলা রয়েছে। এরই মধ্যে তিন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আবার বেরিয়ে আসেন। নগরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শামীম।
র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ভোটকেন্দ্রের সামনে গুলিবর্ষণের পর শামীম সীতাকুণ্ডে চলে যান। সেখানে পাহাড়ে লুকিয়ে থাকেন। পরে ধরা পড়ার ভয়ে অন্য জায়গায় যাওয়ার সময় র্যাব তাঁকে ধরে ফেলে।