দুর্বৃত্তদের ছোড়া একটি গুলি অপসারণ করা যায়নি, ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন যুবদল নেতা

রাজশাহীর বাগমারার গুলিবিদ্ধ যুবদল নেতা মুনসুর রহমান। এক পায়ে থাকা বুলেট এখনো অপসারণ করা যায়নি। গতকাল বুধবার রামরামা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

দুই পায়ে বুলেটের দৃশ্যমান ক্ষত। গোটা শরীরের এখানে–সেখানে ছড়িয়ে আছে আঘাতের চিহ্ন। মুনসুর রহমানের (৩৮) চোখ-মুখজুড়ে যেন এখনো আতঙ্ক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া একটি বুলেট তাঁর বাঁ পায়ের স্পর্শকাতর স্থানে বিদ্ধ হয়। এটির অপসারণ নিয়েই বেশ উদ্বিগ্ন তিনি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তাঁর সময় কাটছে। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার রামরামা গ্রামে তাঁর বসতবাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তদের মারধর ও হামলার শিকার হন মুনসুর। সেই সঙ্গে গুলি করা হয় তাঁর দুই পায়ে। তিনি উপজেলার রামরামা গ্রামের বাসিন্দা ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক।

মুনসুর জানান, তাঁর বাঁ পায়ের বুলেটটি স্পর্শকাতর স্থানে আটকে থাকায় অপসারণ করা যাবে না এবং সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবেন কি না, এ নিয়ে চিন্তিত।

মুনসুর রহমান বলেন, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিনিসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা ভবানীগঞ্জে যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাড়িয়া ইউনিয়নের চানপাড়া আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সমর্থকেরা লাঠি, হকিস্টিক, রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁদের ধাওয়া করেন। এ সময় অন্যরা পালিয়ে গেলেও ধানখেতের ভেতরে পড়ে যান তিনি। সেখানেই তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। পিটিয়ে জখম করার পর দুই পায়ে দুটি গুলি করে সেখানে ফেলে চলে যায় হামলাকারীরা। পরে স্থানীয় একদল নারী অচেতন অবস্থায় ধানখেত থেকে উদ্ধার করে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ডান পায়ের গুলিটি বের করা হলেও বাঁ পায়ের বুলেটটি স্পর্শকাতর স্থানে আটকে আছে। ফলে তা বের করা সম্ভব হয়নি। পরে ঢাকার বারডেম হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগেও চিকিৎসা নেন তিনি।

গুলিতে আহত অবস্থায় মুনসুরকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৫ আগস্ট রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: সংগৃহীত

ওই ঘটনায় হামলাকারীদের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের স্থানীয় ক্যাডার বলে মন্তব্য করেছেন গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আসাদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মারপিট ও গুলির পর মুনসুরকে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায় তারা। এলাকার লোকজন হওয়ার পরও নৃশংসভাবে কেউ এমন হামলা করতে পারে না!

মুনসুরের স্ত্রী শিমু খাতুন আক্ষেপ নিয়ে বলেন, বিএনপি করাই কি তাঁর স্বামীর অপরাধ? কয়েক দিনে চিকিৎসা করাতে সব পুঁজি শেষ। এখন কী করবেন, তা নিয়েই চিন্তিত।

সেদিন হামলার কথা মনে হলে এখনো আঁতকে ওঠেন মুনসুর। এ ঘটনার বিচারও চান। তবে গতকাল পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।