ক্রমিক খুনি রসু খাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল

চাঁদপুরের আলোচিত ‘ক্রমিক খুনি’ রসু খাঁ। ২৭ নভেম্বর ২০২২ফাইল ছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুরে আলোচিত পারভীন হত্যা মামলায় ক্রমিক খুনি রসু খাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এ মামলায় দণ্ডিত অপর দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই দুজন হলেন রসু খাঁর ভাগনে জহিরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগী মো. ইউনুছ। বিচারিক আদালতের রায়ে রসু খাঁসহ এই তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।  

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন। ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও বিচারিক রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে থাকা দুই আসামির করা জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে এ রায় দেওয়া হয়।

তিন আসামির মধ্যে রসু খাঁ ও জহিরুল কারাগারে আছেন আর ইউনুছ পলাতক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রসু খাঁ সিরিয়াল কিলার, অনুকম্পা পেতে পারেন না বলে রায়ে এসেছে। পারভীন হত্যায় অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রসু খাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল এবং জহিরুল ও মো. ইউনুছকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে ধর্ষণের কারণে পারভীনের মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এ অভিযোগ থেকে আসামিরা অব্যাহতি পেয়েছেন।’

পারভীন হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবদুল মান্নান ২০১৮ সালের ৬ মার্চ রায় দেন। রায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৩) ধারায় তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পাশাপাশি হত্যার (দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারা) অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে আসে, যা ২০১৮ সালে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নিবন্ধিত হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর রসু খাঁ জেল আপিল করেন। আর জহিরুল জেল আপিল ও আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে দুই আসামির করা জেল আপিল ও আপিলের ওপর একসঙ্গে ৪ জুলাই শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত রায়ের জন্য ৯ জুলাই তারিখ রাখেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রবিউল ইসলাম। রসু খাঁ ও পলাতক ইউনুছের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এস এম শফিকুল ইসলাম। জহিরুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফয়েজ আহমেদ ও মো. শফিউল্লাহ।

রায়ের পর জহিরুলের আইনজীবী ফয়েজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২০ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সময়ে রসু খাঁসহ তিন আসামি ফরিদগঞ্জ থানার হাসা খালের দক্ষিণ পাশে পারভীনকে ধর্ষণ করেন এবং পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরদিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে। পরে ফরিদগঞ্জ থানায় এজাহার দায়ের করেন পুলিশের উপপরিদর্শক মীর কাশেম।

রসু খাঁ সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে একসময় ক্রমিক খুনিতে পরিণত হন। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর ওই গ্রামে মসজিদের ফ্যান চুরির মামলায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর এক এক করে তাঁর রোমহর্ষ হত্যাকাণ্ডের চিত্র বেরিয়ে আসে। রসু খাঁ নিজের মুখে স্বীকার করেন ১১ নারী হত্যার কথা। টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর।

রসু যাঁদের হত্যা করেছেন, তাঁরা সবাই ছিলেন পোশাককর্মী। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জে এনে ছয়টি, চাঁদপুর সদরে চারটি এবং হাইমচরে একটি মেয়েকে হত্যা করেন। রসু খাঁ যাঁদের হত্যা করেছেন, তাঁরা সবাই ছিলেন ১৬ থেকে ৩৫ বছরের পোশাককর্মী।

আরও পড়ুন