ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে লাঠি হাতে ঢুকে পড়েছিলেন বেশ কয়েকজন যুবক

আনসার সদস্যরা জরুরি বিভাগে ঢুকে পড়া লাঠি হাতে থাকা যুবকদের বের করে দেনছবি: প্রথম আলো

তখন সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। হঠাৎ হেলমেট পরে লাঠি হাতে বেশ কয়েকজন যুবক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আসেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী কোনো ছাত্র আছে কি না, তা খুঁজতে থাকেন। কয়েকজন জরুরি বিভাগে ঢুকেও পড়েন।

একপর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেন কয়েকজন যুবক। এ সময় হাসপাতালে রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জরুরি বিভাগের ভেতরে অবস্থান করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, লাঠি হাতে কয়েকজন জরুরি বিভাগে ঢুকে হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের যাঁরা এখানে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের মারধর করেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আনসার সদস্য মোহাম্মদ ইয়াসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরুরি বিভাগের সামনেই বিকেল থেকে আমরা দায়িত্ব পালন করছি। তবে সন্ধ্যার পর কয়েকজন যুবক ঢুকেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওম প্রকাশ হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন
ছবি : আসাদুজ্জামান

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বেলা দুইটার পর যেসব শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে বিকেলের পর বেশ কয়েকজন যুবক লাঠি হাতে জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলেন। তিনি নিজে তাঁদের না ঢোকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তারপরও কয়েকজন ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরে আনসার সদস্যদের সহায়তায় দ্রুত হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, হাসপাতালে অনেক ক্রিটিক্যাল রোগী আছেন। বাইরে থেকে এসে হুংকার দেওয়া কিংবা চিৎকার-চেঁচামেচি করা, সেটি একেবারেই উচিত নয়। ঢাকা মেডিকেলে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে জরুরি ভিত্তিতে আরও ফোর্স মোতায়েন করার অনুরোধও তিনি করেছেন।

রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক, ভয়

বেলা দুইটার পর থেকেই সংঘর্ষে আহত ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আসতে শুরু করেন। রাত আটটা পর্যন্ত কয়েক দফা লাঠি হাতে হেলমেট পরা যুবক জরুরি বিভাগের সামনে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, অন্তত তিনবার তাঁরা জরুরি বিভাগের চিকিৎসাকেন্দ্রের মধ্যেও ঢুকে পড়েন।

ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার ইডেন কলেজের একজন ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, বেলা তিনটার দিকে তাঁরা রাজু ভাস্কর্য থেকে সূর্যসেন হল হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসেন। তখন হেলমেট পরা কয়েকজন যুবক তাঁদের এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। তাঁর মাথায় আঘাত লাগলে তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।

অ্যাম্বুলেন্সের চালক নাসির উদ্দিন। তিনি কুষ্টিয়া থেকে রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এসেছিলেন। হঠাৎ হেলমেট পরা কয়েকজন যুবক তাঁর গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন
ছবি: আসাদুজ্জামান

ইডেন কলেজের ওই শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভয়ের মধ্যে আছি। আমার সঙ্গে থাকা বন্ধুরাও খুব ভয়ের মধ্যে আছে। হাসপাতাল থেকে বের হলেই মারধর করা হচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরেও তারা ঢুকেছিল।’

কেবল ইডেন কলেজের এই শিক্ষার্থী নন, তাঁর মতো অন্তত পাঁচজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বলছেন, হাসপাতালেও তাঁরা নিরাপদ নন। এখানেও তাঁরা মারধরের শিকার হচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওম প্রকাশ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রাত আটটার দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের লোকজন তাঁকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন। তিনি মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন।

ওম প্রকাশ বলেন, ‘আমরা হলেও ফিরতে পারছি না। খুব ভয়ে আছি। কোথায় নিরাপদ, সেটি বুঝতে পারছি না। ’

পায়ে গুলি লেগেছে ছাত্রলীগের নেতা সাজেদুল ইসলামের
ছবি: আসাদুজ্জামান

ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি

নিউমার্কেট থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের ভেতরে অবস্থান করা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ঢিল ছুড়ছিলেন। তিনি শহীদুল্লাহ হলের সামনে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ তাঁর পায়ে গুলি লাগে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

সাজেদুল ইসলাম বলেন, তাঁকে যখন জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢোকানো হচ্ছিল, তখন সেখানে অবস্থান করা কোটা সংস্কারপন্থী ছাত্ররা তাঁকে মারধর করেন।