মেধাসম্পদ সুরক্ষায় দরকার প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচিয়ে রাখা
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই পণ্য শুধু তালিকাভুক্ত হলেই হবে না, এর জন্য চাই মেধাসম্পদ সুরক্ষার নীতিমালা। বাংলাদেশের অনেক জিআই পণ্যের বৈশিষ্ট্য স্থানীয় প্রকৃতিনির্ভর। যেমন টাঙ্গাইলের শাড়ির জন্য শুধু কারিগর নয়, দরকার এই বুননের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি উপাদান রক্ষা করা। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নদীর পানি থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট ধানের খই। সেসবও রক্ষা করতে হবে।
‘মেধাসম্পদ সুরক্ষা: প্রেক্ষিত, চ্যালেঞ্জ এবং প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে উঠে এল এসব মতামত। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেনদিয়ার জাহেদ হাসান মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যবিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ। তিনি বলেন, ‘দেশের গ্রামীণ সমাজের প্রাণসম্পদ, সাংস্কৃতিক উপাদানসহ জিআই পণ্যের মেধাসম্পদ সুরক্ষায় অবশ্যই আমাদের বিদ্যমান জিআই আইনকে জনগণের পর্যালোচনার জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। যেসব জিআই নিয়ে দ্বিরাষ্ট্রিক তর্ক আছে, সেসব মীমাংসায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এ সময় তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে সম্প্রতি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের পক্ষ থেকে তাদের জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টার প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে ফেলছি, ফলে ভৌগোলিকভাবে জিআই রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক আসিফ নজরুল বলেন, মেধাসম্পদ বলতে আসলে কী বোঝায়, এই ধারণা আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বিশ্বের সব উন্নত দেশ তাদের মেধাসম্পদ সুরক্ষায় অনেক এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে বিষয়টিকে এখন গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিআই পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের দায়িত্ব সরকারের। আইন প্রণয়ন করতেই কালক্ষেপণ হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।
জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর বক্তব্যে উঠে আসে, মেধাসম্পদ সুরক্ষা নিয়ে এখনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে, সেই কথা। এ সময় তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রতিনিধিত্ব করে এমন জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ তুলে ধরেন।
মানবাধিকারকর্মী শামসুল হুদার বক্তব্যে উঠে আসে এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হলে আলোচনার গুরুত্বের কথা। আইনজীবী তাসনুভা শেলি বলেন, ‘সব সময় আইনের দিকে তাকালে আমরা খুব বেশি দূর এগোতে পারব না। আমাদের এখন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিখতে হবে।’
প্যাটেন্ট অধিপ্তরের সাবেক রেজিস্ট্রার মো. আবদুর রউফ বলেন, শুধু জিআই আইন দিয়ে সম্পদ সুরক্ষা করা যাবে না। যেমন শুধু শাড়ি নয়, শাড়ির ভেতরের নকশাটিরও রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তাই সবার দায়িত্ব নকশার রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে এগিয়ে আসা। তিনি বলেন, ‘গ্রামবাংলায় অনেক সংস্কার আছে, যা আমাদের দেশের মেধাস্বত্ব। বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব শিল্প–সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের প্যাটেন্টগুলো রক্ষা করা।’
আজকের এ আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক আবু সাঈদ খান। তিনি বলেন, ‘ধান, পান, গান, লালন, হাসান সবই এখন অনিরাপদ। শোষণের নতুন মাত্রা হচ্ছে প্যাটেন্টের মালিক হওয়া। আমাদের মতো ছোট ছোট দেশগুলোর এখন নিজেদের সম্পদ রক্ষাই চ্যালেঞ্জ।’ এ নিয়ে জনগণের সঙ্গে সরকারকে আলোচনার পরামর্শ দেন তিনি। আলোচনা পর্ব শেষে ছিল উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব। শ্রোতারা জিআই পণ্য, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা বিষয়ে আলোচকদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।