বার্ষিক বরাদ্দের তিন গুণ ছয় মাসেই খরচ করেছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সরকারি ‘গোয়েন্দা ব্যয়’ খাতে বার্ষিক বরাদ্দের প্রায় তিন গুণ খরচ করেছেন মাত্র ছয় মাসে। অঙ্কের হিসাবে এটি দেড় কোটি টাকার মতো। তবে এ টাকা তিনি কোন খাতে ব্যয় করেছেন, সেই হিসাব পাওয়া যায়নি। বিটিআরসি তাঁর কাছে হিসাব চেয়েছে।

সরকারের জেনারেল ফাইন্যান্সিয়াল রুলসে ‘সিক্রেট সার্ভিস এক্সপেন্ডিচার’ বলে উল্লেখিত ব্যয়কে সাধারণত গোয়েন্দা ব্যয় বলা হয়। মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার এ ধরনের ব্যয়ের খাত থাকে। সাধারণত সোর্স ফান্ড হিসেবে এ খাত রাখা হয়।

গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনায় এ ধরনের কিছু বরাদ্দ থাকে। বিটিআরসির এ রকম খাত কেন থাকবে এবং তা আইন-সমর্থিত কি না, সেটা দেখা প্রয়োজন।
মো. মুসলিম চৌধুরী, সাবেক মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) ও অর্থসচিব

টেলিযোগাযোগ সেবা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিরও এ ধরনের একটি খাত রয়েছে, যা মূলত বাজেটের থোক বরাদ্দ থেকে আসে। বিটিআরসি সূত্র জানায়, মনিটরিং, গোয়েন্দা সেবা ও সোর্স মানি (তথ্যের বিনিময়ে সোর্সকে দেওয়া অর্থ) খাতে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাধারণত সংস্থার চেয়ারম্যান এ অর্থ ব্যয় করে থাকেন। বছরে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন তিনি।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মুখে প্রায় আট মাসের মাথায় পদত্যাগ করেছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। একসময় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষস্থানীয় পদধারী ছিলেন তিনি। গত ১৪ ডিসেম্বর তিনি বিটিআরসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। আর ১৪ আগস্ট পদত্যাগ করেন। কিন্তু দায়িত্বে থাকার ছয় মাসেই গোয়েন্দা খাতে তিনি ব্যয় করেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা।

বিষয়টি নিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফোন ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালে তিনি জবাব দেননি।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মুখে প্রায় আট মাসের মাথায় পদত্যাগ করেছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। একসময় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষস্থানীয় পদধারী ছিলেন তিনি। গত ১৪ ডিসেম্বর তিনি বিটিআরসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। আর গত ১৪ আগস্ট পদত্যাগ করেন।

বিটিআরসি এ গোয়েন্দা খাতের ব্যয়ের হিসাব চালু করে ২০০৯ সালের জুনে। সে সময় সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ। ওই খাতে ২০১৫ সাল থেকে চলতি আগস্ট মাস পর্যন্ত লেনদেনের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৫ সালের মে মাসে এ খাতে টাকা ছিল ৪৬ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি। পরে বিভিন্ন সময়ে এখানে সুদ যুক্ত হয়। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে গিয়ে ১৫ লাখ টাকা তোলা হয়। এর পরের পাঁচ বছর এখান থেকে কোনো টাকা তোলা হয়নি।

পরবর্তী সময়ে খাতটি থেকে ২০২১ সালের জুন ও ২০২২ সালের মার্চে কিছু টাকা তোলা হয়েছিল। ২০২৪ সালের জানুয়ারির আগপর্যন্ত আর কোনো টাকা এখান থেকে তোলা হয়নি।

মহিউদ্দিন আহমেদ যখন চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন, তখন গোয়েন্দা খাতের অ্যাকাউন্টে টাকা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকার বেশি। অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার হিড়িক শুরু হয় মহিউদ্দিন আহমেদের সময়কালে। গত ৪ জানুয়ারি তিনি ২৫ লাখ টাকা তোলেন। এরপর গত ১২ জুন পর্যন্ত ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বেশি এ খাত থেকে ব্যয় করেন।

বিটিআরসি সূত্র জানায়, সাধারণত এ খাতের ব্যয়ে সংস্থাটির অর্থ ও রাজস্ব বিভাগের কারও স্বাক্ষর রাখা হয়। কিন্তু মহিউদ্দিন আহমেদ তা করেননি। পাশাপাশি ওই অর্থ কোথায় ব্যয় করেছেন সেটাও বিটিআরসিকে জানাননি।

এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) মহিউদ্দিন আহমেদের কাছে অর্থ ব্যয়ের প্রত্যয়ন সার্টিফিকেট চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি। তাতে বলা হয়েছে, এ খাতে অর্থ ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। বিটিআরসির বার্ষিক অর্থবিবরণী প্রস্তুত করার জন্য সিক্রেট সার্ভিস এক্সপেন্ডিচারের আর্থিক লেনদেন হিসাবভুক্ত করতে হবে।

বিটিআরসির সাবেক একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মূলত অবৈধ ভিওআইপিসহ কোথাও কোনো কিছুর অপব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটির খোঁজ নেওয়ার জন্য এ খাত থেকে অর্থ ব্যয় করা হয়। তবে এ খাতে যে পরিমাণে বরাদ্দ থাকে, তার সবটা খরচ করার দরকার হয় না।

উল্লেখ্য, আইনে বিটিআরসির আর্থিক বিষয়াদিতে এ ধরনের কোনো খাত বা তহবিল থাকার কথা উল্লেখ নেই।

সাবেক মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) ও অর্থসচিব মো. মুসলিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনায় এ ধরনের কিছু বরাদ্দ থাকে। বিটিআরসির এ রকম খাত কেন থাকবে এবং তা আইন-সমর্থিত কি না, সেটা দেখা প্রয়োজন।’