ভোট দেওয়ার জন্য সহিজান ও বাচ্চুর ‘যুদ্ধ’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের শাহ্ মখদুম কলেজ কেন্দ্রে সহিজান (ডানে) ও বাচ্চু শেখ (বামে)
ছবি: প্রথম আলো

সহিজানের বয়স ৭৫। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। তবে মাস কয়েক ধরে শয্যাশায়ী। শয্যাশায়ী হলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে খুব করে মন চাইছিল তাঁর।

কিন্তু সহিজানের পা যে চলে না। তাঁর ভোট দেওয়ার ইচ্ছার কথা শুনে এক নিকটাত্মীয় তাঁকে জানালেন, পাশের বাড়িতে একটা হুইলচেয়ার আছে। হুইলচেয়ারটি এনে তাঁকে ভোটকেন্দ্রে নেওয়া যেতে পারে।

সহিজানের আঙুলের ছাপ নেওয়ার চেষ্টা
ছবি: প্রথম আলো

সহিজান রাজি হয়ে গেলেন। পাশের বাড়ি থেকে হুইলচেয়ার আনা হলো। হুইলচেয়ারে করে তাঁকে আজ বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ্ মখদুম কলেজের নারী কেন্দ্রে নিয়ে যান ভাতিজার বউ রোকেয়া বেগম।

কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি। এই সারি দেখে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন সহিজান। তবে কেন্দ্রে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা সহিজানকে সহায়তায় এগিয়ে আসেন। তাঁকে আগে বুথে ঢোকার সুযোগ করে দেন তাঁরা।

কিন্তু বিপত্তি বাধে বুথের ভেতর।

সহিজানের আঙুলের ছাপ নিতে পোলিং কর্মকর্তা টেবিল কিছুটা সরিয়ে জায়গা করে দেন। একে একে তাঁর সব আঙুল দিয়ে চেষ্টা করা হলো। কিন্তু ছাপ মেলে না। এদিকে ভোটারদের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।

একপর্যায়ে পোলিং অফিসার বলেন, ‘চাচি, একটু অপেক্ষা করেন। অন্যদের কয়েকটা ভোট নিয়ে নিই।’

অপেক্ষাকালে সহিজানের আঙুলে স্যানিটাইজার মাখছিলেন তাঁর সঙ্গে থাকা রোকেয়া বেগম। আঙুল পরিষ্কার করতে করতেই নামে ঝুম বৃষ্টি।

বৃষ্টির মধ্যে বুথের এক কোণে অপেক্ষা করতে লাগলেন সহিজান। এর মধ্যে কেটে যায় আধা ঘণ্টা। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আবার সহিজানের আঙুলের ছাপ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এবারও ব্যর্থ।

দ্বিতীয় দফায় পাঁচ মিনিট চেষ্টার পর সহিজানকে বেলা তিনটার দিকে আবার বুথে আসতে বলেন পোলিং এজেন্ট।

ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে। ভোট দিতে না পেরে মন খারাপ করে বাড়িতে ফিরে যান সহিজান।

সহিজানের মতোই হুইলচেয়ারে করে স্বজনদের সঙ্গে একই কেন্দ্রে আসেন বাচ্চু শেখ। তাঁর শরীরের এক পাশ অবশ।

হুইলচেয়ারে করে কেন্দ্রে আসেন বাচ্চু শেখ
ছবি: প্রথম আলো

বাচ্চুর ভোটের বুথ পড়েছে ভবনের তিনতলায়। স্বজনেরা অনেক কষ্টে হুইলচেয়ারসহ তাঁকে তিনতলায় নিয়ে যান।

বাচ্চুর অবশ্য আঙুলের ছাপ মেলাতে সমস্যা হয়নি। তিনি ভোট দেওয়ার পরই নামে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টিতে কেন্দ্রে আটকে পড়েন বাচ্চু।

বাচ্চু প্রথম আলোকে বলেন, বছর দেড়েক আগে তিনি স্ট্রোক করেন। সে সময় তিন মাস হাসপাতালে ছিলেন। আগে কখনো ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেননি তিনি। তাই এবারও ভোট দেওয়ার আগ্রহ দেখালে তাঁকে স্বজনেরা হুইলচেয়ারে করে কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।

কলেজটির নারী কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চিরঞ্জীব কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, বয়স্ক মানুষদের ভোট দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে আঙুলের ছাপ মেলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য ভোট গ্রহণে দেরি হচ্ছে।