উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে কখনো স্থানীয় পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র ও জনসাধারণের সম্পদ নষ্ট করা যাবে না। কোম্পানি বা সংস্থাকে আইনগতভাবে দায়বদ্ধ করতে হবে, যাতে তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তারা ক্ষতিপূরণ দেয়। পাশাপাশি রোডম্যাপ করে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে যেতে হবে।
দ্বিতীয় জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশে দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এ সমাবেশ আজ রোববার শেষ হয়েছে। এ সমাবেশে দেশি–বিদেশি অংশীজনেরা জলবায়ু, জ্বালানি ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা করেন।
দুই দিনের এ সমাবেশে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, রিভারফক্স এনভায়রনমেন্টালের সিইও ডোনা লিসেনবি, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের ন্যাশনাল কো–অর্ডিনেটর আয়ান রিভেরাসহ অনেক দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনেরা অংশ নেন।
কৌশল নির্ধারণী অধিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের দ্বিতীয় দিন শুরু হয়। ধরার উপদেষ্টা মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, এপিএমডিডির সিনিয়র অ্যানার্জি ক্যাম্পেইনার মালো তাবুইস ন্যুয়েরা, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ জহিরুল হক প্রমুখ আলোচনা করেন।
সমাবেশ শেষে আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে দুই দিনের এ সমাবেশে আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে, তা তুলে ধরেন সমাবেশ আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চল, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের ওপর চরমভাবে আঘাত করছে উন্নয়ন প্রকল্পের নেতিবাচক প্রভাবগুলো। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা জীবিকা হারাচ্ছেন। লবণ, তরমুজ, পানের মতো ফসলও হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসার কথা, সেখানে এর বিস্তার করার জন্য কাজ করছে সরকার। জলবায়ুসংক্রান্ত ঋণের বোঝাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ থেকে যেসব প্রস্তাব বা দাবি এসেছে, তা–ও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এর মধ্যে রয়েছে জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি করা; জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়নগত চাপের প্রভাবে নারী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও প্রান্তিক মানুষদের ওপর যে ভিন্ন ও অসম্পূর্ণ প্রভাব পড়ছে, তার সঠিক মূল্যায়ন করা; উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে অবশ্যই পরিবেশগত ও সামাজিক সুরক্ষা, লিঙ্গ ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বাঁধ সংস্কার ও শক্তিশালী করা। পাশাপাশি বাঁধনির্ভর নগরায়ণ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে সমাবেশে।
বাঁধ ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জীবিকা উৎস পুনরুদ্ধার করা এবং বিকল্প জীবিকার উৎসও নিশ্চিত করার বিষয়টি উঠে এসেছে।
কয়লাচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিত্যাগের জন্য একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে সমাবেশ থেকে। পাশাপাশি দেশের উপকূল এবং বিভিন্ন স্থানে পানি, বায়ু ও মাটিদূষণ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবিও জানানো হয়েছে।