সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

বিদ্যমান সংবিধানের প্রস্তাব হুবহু বহাল রাখা, ‘রাষ্ট্রধর্ম’ সংবলিত সংবিধানের অনুচ্ছেদ বাতিল, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব রাখাসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

গতকাল সোমবার রাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের অনলাইন পোর্টালে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সংবিধানের প্রস্তাব হুবহু বহাল রাখার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছে ঐক্য পরিষদ। কারণ, এ প্রস্তাব জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করে।

এ ছাড়া প্রস্তাবে ‘রাষ্ট্রধর্ম’–সংবলিত সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদ বাতিলের অভিমত ব্যক্ত করে পরিষদ বলেছে, অনুচ্ছেদটি সংবিধানের মূল প্রস্তাবের ‘সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার’ নিশ্চিত করার সম্পূর্ণ পরিপন্থী ও সাংঘর্ষিক; যা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করে।

সংগঠনটি তাদের প্রস্তাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা’ শীর্ষক অনুচ্ছেদ হুবহু বহাল রাখার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছে। এর কারণ হিসেবে পরিষদ বলেছে, এই অনুচ্ছেদ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য, জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে; যা সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি।

প্রস্তাবে সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদ হুবহু বহাল রাখার পক্ষে অভিমত দিয়েছে পরিষদ। তারা মনে করে, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন অপরিহার্য। এতে বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জনজীবনে ও সমাজে বিরাজমান বৈষম্য দূর করা এবং আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’ হওয়ার ক্ষেত্রে এ প্রস্তাবগুলো সংবিধানে যুক্ত হওয়া অত্যাবশ্যক।

প্রস্তাবে সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদের পর (৫) অনুচ্ছেদ হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে, যেমন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, জাতীয় নির্বাচন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশনসহ সব ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব ও অংশীদারত্ব সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা এবং (৬) অনুচ্ছেদ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিতের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ৬টি কমিশন কাজ শুরু করেছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ছয়টি কমিশন সরকারের কাছে তাদের সংস্কার প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন ৪ নভেম্বর অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে।