বেশির ভাগ কারখানা চালু, তবে শ্রমিক বিক্ষোভে বন্ধ ৯০টি

  • সেনা, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবের টহল।

  • বাইপাইলে বিক্ষোভ, হামলা।

  • ওষুধশিল্প খাতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

সাভারের পলাশবাড়ী এলাকার পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেড কারখানার সামনে নানা দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভফাইল ছবি: প্রথম আলো

তৈরি পোশাকশিল্প খাতের পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল সোমবার দেশের অধিকাংশ পোশাক কারখানা খোলা ছিল, শ্রমিকেরাও কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকায় অন্তত ৯০টি কারখানায় গতকাল কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

শিল্প পুলিশ, কারখানামালিক ও শ্রমিকনেতারা জানান, বেতন ও হাজিরা বোনাস দেওয়া, টিফিন বিল বৃদ্ধি এবং শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ কিছু দাবিতে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্প এলাকায় কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন। সেই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে ও গতকাল দিনে আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুর এলাকায় ১ হাজার ২৯৪টি পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ৯০টি কারখানায় কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

অন্যদিকে বন্ধ ৯০ কারখানার মধ্যে ৬৯টি কারখানায় আগে থেকে ছুটি ঘোষণা করেছিল প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ১৩টি কারখানা গতকাল খোলা থাকলেও শ্রমিকেরা কাজ না করে বের হয়ে যান; আর আটটি কারখানায় শ্রমিকেরা প্রবেশের পর কাজ বন্ধ করে ভেতরে বিক্ষোভ করেন।

আশুলিয়ায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও কারখানা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গতকাল সকালে নির্ধারিত সময়ে সাভার ও ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকেরা উপস্থিত হন। তবে আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর, ইউনিকসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে কাজে যোগ না দিয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে শ্রমিকদের দাবি পূরণ করতে না পারায় আগে থেকেই অনেক কারখানার ফটকে বন্ধ ও ছুটির নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত এই এলাকার অন্তত ৭৯টি কারখানায় কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে সাভারের অন্য এলাকার কারখানাগুলোয় শ্রমিকেরা ঠিকভাবে কাজ করছেন।

এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে গতকাল আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের কিছু কারখানার শ্রমিকেরা মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। সকালে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের শিমুলতলা এলাকায় সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন ইউফোরিয়া অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা। তখন সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। আবার চার বছর আগে বন্ধ হওয়া লেনী ফ্যাশন ও লেনী অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) মূল ফটকের ভেতরে মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক মো. আজাদ বলেন, ছয় মাস আগে দুটির মধ্যে একটি কারখানা ৮৩ কোটি টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে মালিকপক্ষের কাছে শ্রমিকদের মোট পাওনা ৬৬ কোটি টাকা। অথচ বিক্রির টাকা ব্যাংকে জমা থাকলেও শ্রমিকদের তা দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান চান শ্রমিকেরা।

র‌্যাবের গাড়ি ভাঙচুর

গত কয়েক দিনে আশুলিয়ার যেসব এলাকায় টানা শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে, সেখানে নিরাপত্তা আরও বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কে গতকালও টহল দিয়েছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সদস্যরা। এ ছাড়া বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ ও এপিবিএনের সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন।

তবে বাইপাইল এলাকার শিমুলতলায় গত রোববার রাতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন দাবিতে ইউফোরিয়া অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ ও কারখানা ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে যান। তখন তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর দুটি গাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। এ বিষয়ে র‍্যাব-৪–এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-২) মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, শিল্পাঞ্চলে যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে, তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

ওষুধ খাত প্রায় স্বাভাবিক

দেশের ওষুধশিল্প খাতের পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে। দেশে প্রায় ৩০০ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে সচল কারখানার সংখ্যা প্রায় ২০০। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির (বিএপিআই) সভাপতি আবদুল মুক্তাদির জানান, ওষুধ খাতে এখন উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা আর নেই। দু-একটি বাদে প্রায় সব কারখানায় স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিএপিআই সূত্রে জানা গেছে, ওষুধ খাতে সর্বশেষ যে দু-একটি কারখানায় সমস্যা ছিল, তারাও সম্ভাব্য সমাধানে যেতে পেরেছে। যেমন হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে টানা কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছিলেন শ্রমিকেরা। তবে সমঝোতা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে গতকাল সন্ধ্যায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকেরা। হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলন প্রত্যাহার করায় আশা করছি মঙ্গলবার থেকে আমরা নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’

তৈরি পোশাক খাতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গতকাল সন্ধ্যায় যৌথ বৈঠক করেছেন আশুলিয়া অঞ্চলের কারখানা মালিক, শ্রমিক নেতা, সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে বিজিএমইএ পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, যৌথ বৈঠকে মঙ্গলবার আশুলিয়া অঞ্চলে সব কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব দাবি কতটা বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।