ভারী বর্ষণে ডুবে আছে কক্সবাজার শহর, হোটেলে আটকা পর্যটকেরা

কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে ডুবে আছে শহরের ব্যস্ততম কলাতলী সৈকত সড়ক। আজ বিকেলেছবি: প্রথম আলো

টানা দুদিনের ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থান জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। শহরের প্রধান সড়কসহ অন্তত ২৫টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকায় আজ বৃহস্পতিবার দিনভর যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের দুপাশে দোকানপাট, অফিস এবং লোকজনের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কের দুপাশে তৈরি নালাগুলো ভরাট থাকায় পুরো পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানালেন পৌরবাসী।

এদিকে ভারী বর্ষণের কারণে শহরের ১২টির বেশি পাহাড়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু অংশ ধসেও পড়ছে। আজ সকালে শহরের পৃথক দুটি স্থানে ভূমিধসের ঘটনায় পাঁচ বছর বয়সী একজন শিশু ও একজন গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গত ২১ জুন ভোর চারটার দিকে শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে এক দম্পতির মৃত্যু হয়। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পাহাড়ধসের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা। শহরের বিভিন্ন পাহাড়ে ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে বসতি করছেন অন্তত দেড় লাখ মানুষ।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এ বি হান্নান বলেন, গতকাল বুধবার বেলা তিনটা থেকে আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ২৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কাল শুক্রবারও ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।

দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে পুরো শহর ডুবে গেছে। বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শহরের কলাতলী সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। পর্যটকেরা হোটেলে আটকা পড়েন। কলাতলী সড়ক থেকে সমুদ্রসৈকতে নামার সুগন্ধা সড়কটিও ডুবে আছে। সড়কে হাতে গোনা কয়েকটি মিনিবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করলেও অলিগলিতে ঢুকতে পারছে না।

শহরের সিভিল সার্জন কার্যালয়, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, এবিসি রোড, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, বড়বাজার, রুমালিয়ারছড়ার শত শত দোকান, অফিস–আদালত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি জমে আছে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, বুধবার রাত তিনটা থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়, তা আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অব্যাহত আছে। তাতে পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্টহাউসের কলাতলী হোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সৈকত সড়কের দুপাশের নালা আবর্জনায় ভর্তি থাকায় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির পানি সাগরে নেমে যেতে না পেরে সড়কে উপচে পড়ছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। শহরে বর্তমানে কয়েক হাজার পর্যটক অবস্থান করলেও তাঁদের অধিকাংশ হোটেল কক্ষে অলস সময় পার করছেন।

বাজারঘাটা এলাকার গৃহবধূ সাবেকুন্নাহার বলেন, দুপুর ১২টার দিকে প্রধান সড়ক উপচে পাহাড়ি ঢলের পানি তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়েছে, বিকেল পাঁচটার সময় সেই পানি অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। পানিতে ঘরের আসবাব, কাপড়চোপড় ও প্রয়োজনীয় মালামাল নষ্ট হচ্ছে। রান্নাবান্নায় সমস্যা হচ্ছে।

একই অবস্থা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, বাসিন্যাপাড়া, ফদনারডেইল, নাজিরারটেক এলাকায়। এসব এলাকায় অন্তত ৭০ হাজার শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। বৃষ্টির পানিতে সমিতিপাড়া সড়কটি ডুবে থাকায় মানুষের চরম দুর্ভোগ যাচ্ছে।

১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এই ওয়ার্ডের অন্তত দেড় হাজার ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাবে। পৌরসভার ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়তলী, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, খাজা মঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, লারপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় অন্তত ১৪টি উপসড়ক ডুবে আছে।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আয়াছুর রহমান বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় নিধন করে অবৈধ ঘরবাড়ি নির্মাণ থেমে নেই। বিশেষ করে বর্ষণ শুরু হলে একশ্রেণির প্রভাবশালী শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে সরকারি পাহাড় কাটা শুরু করেন। ভারী বর্ষণ হলে কেটে ফেলা পাহাড়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়। একসময় ফাটল অংশ ধসে পড়ে লোকজনের ঘরবাড়িতে পড়ে। তাতে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গত দুই যুগে শহরের ১২টির বেশি পাহাড় কেটে ১২ হাজারের বেশি অবৈধ ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু তাঁদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বুধবার সকাল থেকে কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা লোকজনকে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে এলাকায় জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

শহরের ভরাট নালা পরিষ্কার প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, গতকাল সকালে শহরের সৈকত সড়কের নালা পরিষ্কারের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু দুপুরের দিকে ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি বন্ধ হলে শহরের নালা পরিষ্কার করা হবে। পাশাপাশি পাহাড় নিধন বন্ধেও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।