চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে ২২ বছর ধরে ফিলিংম্যান (শ্রমিক) হিসেবে কাজ করতেন রতন নকরেট (৫১)। বেতন পেতেন ১৪ হাজার টাকার মতো। তাঁর আয়েই চলত পুরো সংসার। গতকাল শনিবার বিকেলে এ কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে মারা যান রতন। একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে এখন দিশাহারা তাঁর পরিবার।
রতনের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দায়। পরিবারে তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে প্রীতম ঘাগ্রা এবার উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রীতম এখন বাড়িতেই আছেন। তাঁর সঙ্গে আজ মুঠোফোনে কথা হয় প্রথম আলোর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমাদের মাথার ওপর থেকে বটগাছটা সরে গেল। আমাদের আর দেখার কেউ রইল না। এখন আমাদের পরিবার কীভাবে চলবে, মা কীভাবে থাকবেন, আমরা জানি না।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত কারখানাটিতে শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদিত হতো। গতকাল বিকেলে কারখানাটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২৫ জন।
মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। রতনের মরদেহ নিতে মর্গে এসেছেন তাঁর শ্যালক মনি ঘাগ্রা। তিনি সীতাকুণ্ডের আরেকটি কারখানায় কাজ করেন। রতনের মৃত্যুর খবর তিনিই প্রথম জানতে পারেন।
মনি প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার এক শ্রমিকের মাধ্যমে তিনি বিস্ফোরণের খবর পান। পরে তিনি মর্গে এসে রতনের লাশ খুঁজে পান। তবে লাশ এখনো বুঝে পাননি।
গতকালের এ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কারখানাটির আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা। বিচ্ছিন্ন লোহা-টিনের টুকরা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত। এ লোহার পাত বিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান দুজন। তাঁরা হলেন মো. সামশুল আলম ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।