ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজের ইফতার কর্মসূচি পণ্ড করলেন বাম ছাত্রনেতারা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজের ইফতার কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার এ ইফতারের আয়োজন করেছিল জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ১৯৯০ সালে জাতীয় ছাত্রসমাজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদ। এটি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যোগাযোগের একটি প্ল্যাটফর্ম। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ ডজনখানেক সংগঠন এই পরিষদের সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ইফতার কর্মসূচি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে টিএসসির মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে জড়ো হন জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতা-কর্মীরা। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেখানে যান গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা। জোটভুক্ত সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, ছাত্র ইউনিয়নের নজির আমিন চৌধুরী প্রমুখের বাধায় কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। পরে ছাত্রসমাজের নেতা-কর্মীরা চলে যান।
ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রসমাজ টিএসসিতে কীভাবে ইফতার কর্মসূচির অনুমতি পেল—এ বিষয়ে জানতে টিএসসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক খোরশেদ আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে টিএসসির উপদেষ্টা সিকদার মনোয়ার মুর্শেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিএসসিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার আয়োজন থাকে। কোন নামে অনুমতি নিয়ে তারা (ছাত্রসমাজ) ইফতারের আয়োজনটি করেছে, জানি না। অনেক সময় কেউ কেউ এক নামে কর্মসূচির অনুমতি নিয়ে অন্য নামে কর্মসূচি করে থাকে। বিষয়টি দেখে বলতে হবে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কর্মসূচি করার বিষয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজ আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি।’
এদিকে ছাত্রসমাজের কর্মসূচি পণ্ড করার পর এক বিবৃতিতে ক্যাম্পাসে ছাত্রসমাজের ইফতারের আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
জোটের সমন্বয়ক ছায়েদুল হক এক বিবৃতিতে বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধের রক্তাক্ত ইতিহাসের অংশ হিসেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজ ও সব সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজকে কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হলো।
বিবৃতিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা নজির আমিন চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া ও ছাত্র ফেডারেশনের (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) সভাপতি মিতু সরকারের স্বাক্ষর রয়েছে।
ছাত্রসমাজ ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্যানেল দিয়েছিল। তখন ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। নিজেদের দলীয় প্যানেলের পক্ষে ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ডাকসু নির্বাচনের দুই দিন আগে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর বাধার সম্মুখীন হয়েছিল তারা।