সরকার দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়ায় লংমার্চ কর্মসূচি স্থগিত তাবলিগের জুবায়েরপন্থীদের
গাজীপুরে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে হামলা–সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় এই ময়দান অভিমুখে আগামীকাল বৃহস্পতিবার লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তাবলিগের মাওলানা জুবায়েরপন্থী হিসেবে পরিচিত ‘শুরায়ে নেজামের’ অনুসারীরা। বিকেলে কাকরাইল মসজিদে নিজেদের মধ্যে বৈঠকের পরে তাঁরা ওই কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি শৃঙ্খলা রক্ষায় সঙ্গীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এই পক্ষের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে ইজতেমা মাঠের ঘটনায় নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য সার্জেন্ট আমিনুল হকের জানাজা হয়। এরপর সেখানে অনুসারীদের উদ্দেশে কথা বলেন মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা মাহফুজুল হক। এ সময় তাঁরা পরামর্শের ভিত্তিতে নেওয়া চারটি দাবি সরকারকে জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। সরকারের সঙ্গে আলোচনা অনুযায়ী ইজতেমার মাঠের পাহারায় তাঁদের ৫০০ জন থাকবেন বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে মোনাজাতের মাধ্যমে জমায়েত কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। তখন মসজিদ প্রাঙ্গণ ছাড়তে থাকেন তাবলিগের এই অংশের অনুসারীরা।
কাকরাইল মসজিদে অবস্থানরত ব্যক্তিদের উদ্দেশে মাওলানা জোবায়ের বলেন, ‘গভীর রাতে নিরীহ সাথিদের ওপর সশস্ত্র হামলা করে শহীদ করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালেও এমন হামলা করা হয়েছিল।’ এ বিষয়ে পরামর্শক্রমে তাঁরা পরবর্তী করণীয় ও কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পরে মাওলানা মাহফুজুল হক উপস্থিত ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেন, ‘গভীর রাত থেকে আমাদের সাথি ভাইদের ওপর বিভীষিকা চালানো হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল জোহর পর্যন্ত সারা দেশ থেকে লংমার্চ করে টঙ্গী ময়দানে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে সরকারের অনুরোধে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এবং আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার ওয়াদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মাশোয়ারা (পরামর্শ) করে এই কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মাওলানা মাহফুজুল হক আরও বলেন, লংমার্চ আপাতত স্থগিত করা হলেও আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে যদি দাবি পূরণ করা না হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। তাদের (সরকারের) ওয়াদা কার্যকর হচ্ছে কি না, সেটি দেখব। যদি তা করা না হয়, তাহলে যে কোনো কর্মসূচির জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
গণমাধ্যমে এ ঘটনাকে সংঘর্ষ বলার সমালোচনা করে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, হামলার ঘটনাকে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা দুই পক্ষের কোনো সংঘর্ষ নয়। এক পক্ষ হামলাকারী, আরেক পক্ষ আক্রান্ত। সাদপন্থীরা গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সাথি ভাইদের ওপর আক্রমণ করেছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করা করেছে। এর আগে ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বরও হামলা করেছে। আবার ঘুমন্ত অবস্থায় আক্রমণ করেছে।
দাবির বিষয়ে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘কাদের হুকুমে আক্রমণ হয়েছে, এটা কোনো গোপন বিষয় নয়; বরং প্রকাশ্যে কিছুদিন ধরে হুমকি দিয়ে হামলা করা হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদেরকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত মামলা করতে বলা হয়েছে।’
ইজতেমার মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সাত বছর ধরে ইজতেমা ময়দান আমাদের হাতে ছিল। আমাদের হাতেই হস্তান্তর করতে হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আপাতত সেখানে যেন অনেক মানুষ না যান। প্রশাসন সেখানে থাকবে। পাশাপাশি আমাদের ৫০০ লোক থাকবে।’
অপর পক্ষকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, তাঁরা (সাদপন্থীরা) নিষিদ্ধ সংগঠনের রূপ নিয়েছে। তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। যদিও আমরা কোনো সময়সীমা দিইনি। তবে এই দাবি পূরণে সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে। মাশোয়ারায় (পরামর্শ) আরও কিছু বিষয় এসেছে। মসজিদে তারা আসতে পারবে কি না, ইজতেমা করতে পারবে কি না, গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারকে অপসারণ—এই বিষয়গুলোও আমরা সরকারকে জানিয়েছি।
মাওলানা মাহফুজুল হক আরও বলেন, টঙ্গীতে ইজতেমা মাঠের পাশ্ববর্তী ‘মসজিদে বেলাল’–এ একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেটি ফিরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে ধৈর্য ধারণ, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা, তারা (সাদপন্থীরা) যেন কোনো ষড়যন্ত্র করে কিছু না করতে পারে, সে জন্য চোখ–কান খোলা রাখতে হবে।
এর আগে কাকরাইল মসজিদে অবস্থানকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, হামলাকারীরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন। তাঁদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই ধরতে হবে। পাশাপাশি সাদপন্থী মাওলানা মুয়াজ বিন নূরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।