বর্তমান সরকারের আমলে দেশে সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশি হত্যা, নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তাঁদের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব অপরাধের বিচারের আশ্বাস দিলেও তিনি আদতে গুরুত্ব দেন না।
আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাগর–রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তাঁরা এমন অভিযোগ তোলেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এই সমাবেশের আয়োজন করে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি খুন হয়েছিলেন। ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এর কোনো কূলকিনারা হয়নি। এমনকি ৯৫ বার সময় নিয়েও এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। সাংবাদিক নেতারা বলেন, দেশের বিচারব্যবস্থা ও তদন্তকারী সংস্থার প্রতি দিন দিন আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘গত এক বছরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চারবার দেখা করেছি। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো সুরাহা করতে বলেছি। তিনি বারবার কথা দিয়েছেন। আমরা আসার পরই তিনি সাংবাদিকদের দাবি ভুলে গেছেন। এটা ঠিক না। আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ভাইবেন না, সাংবাদিকদের হাত থেকে রেহাই পাবেন। আপনাকে ঘেরাও করা হবে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য।’
নিহত বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে ওমর ফারুক বলেন, ‘সাগর–রুনিসহ আরও যাঁরা হত্যার শিকার হয়েছেন, তাঁদের সবার হত্যার বিচার চেয়েছি। আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলতে পারবেন, একটা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? কেন একটা বিচারও করছেন না? আপনাদের আমলে সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশি হত্যা, নির্যাতন, বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।’
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘১১ বছর আগে সাগর–রুনি হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ১১ বছর একই সরকার ক্ষমতায়। অথচ সাগর–রুনি হত্যার বিচার হয় না। কোথায় যাব আমরা?’
সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, একের পর এক সাংবাদিক হত্যা, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্র দেখছে না।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, আদালত ৯৫ বার র্যাবকে সময় দিয়েছে। র্যাব যদি এই হত্যার কূলকিনারা না করতে পারে, তাহলে তারা প্রতিবেদন দিচ্ছে না কেন? বারবার কেন সময় নেওয়া হচ্ছে? অতি দ্রুত এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, সাগর–রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই দাবি থেকে সরবে না ডিআরইউ।
মাছরাঙ্গা টেলেভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ বলেন, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন দীর্ঘ ১১ বছর ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সাগর–রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে। আর কয়েক মাস পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আদালতে সময় নেওয়ার সেঞ্চুরি করবে। ইতিমধ্যে ৯৫ বার সময় নিয়েছে। বিষয়টি খুবই লজ্জার।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, বিদেশ থেকে ফরেনসিক টিম আনা হয়েছিল। তারপর বলা হয়েছিল, ঘাতককে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানানো হয়েছিল, যারা হত্যা করেছে। আজ পর্যন্ত সেই দুজনের নাম জানতে পারলাম না। বিচারব্যবস্থা ও তদন্তকারী সংস্থার প্রতি দিন দিন আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।
ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামালসহ অনেকে। সমাবেশ শেষে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিলও বের করেন।