শাহজাহান ওমরের অস্ত্র প্রদর্শন বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের সমাবেশে অস্ত্র প্রদর্শন বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন তিনি।
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া শাহজাহান ওমর গত সোমবার সকালে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কাঁঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ করেন। সেখানে অস্ত্র হাতে কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল জলিল মিয়াজীকে দেখা গেছে।
সমাবেশে বন্দুক হাতে বিএনপির নেতাকে দেখা যাওয়ায় এলাকায় নানা আলোচনা শুরু হয়। সমাবেশে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি বলেন, সমাবেশ ছিল আওয়ামী লীগের আর সেখানে অস্ত্র হাতে দেখা গেল বিএনপির নেতাকে। আবার তিনি ছিলেন শাহজাহান ওমরের একদম পাশে। প্রকাশ্যে এভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করায় নানা প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, বন্দুকটি শাহজাহান ওমরের লাইসেন্স করা। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় পাশে থাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিয়াজীর কাছে সেটি রাখেন।
তবে শাহজাহান ওমরের সমাবেশে অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। কাঁঠালিয়া থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম এদিন সন্ধ্যায় বলেন, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। নোটিশের জবাবের আলোকে নির্বাচন কমিশন যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেবে, সেভাবে থানা-পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে গতকাল দুপুরে সাক্ষাৎ করেছেন শাহজাহান ওমর। পরে তাঁর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিএনপির বহিষ্কৃত এই নেতা খেপে গিয়ে এক সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘আপনি আইন জানেন? কে বলল, আমি আইন ভেঙেছি?’
এ ছাড়া সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসিতে কেন এসেছি আপনাকে কেন বলব? আমি কেন এসেছি, এ বিষয়ে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে? আমি এমনিতেই ঘুরতে এসেছি, আপনাদের দেখতে এসেছি।’
এ সময় টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের কেউ কেউ ভিডিও করতে গেলে খেপে যান শাহজাহান ওমর। কেন তাঁর ছবি নেওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্ন করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অনুসারীদের আওয়ামী লীগে যোগদান
শাহজাহান ওমরের অনুসারী কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল দুপুরে কাঁঠালিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শাহজাহানের নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা এ ঘোষণা দেন।
আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দেওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াছ মিয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান, যুবদলের সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাসিব ভুট্টো ও সদস্যসচিব জাকির হোসেন উল্লেখযোগ্য। শাহজাহানের সমাবেশে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকা আবদুল জলিলকেও সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়।
জানতে চাইলে ইলিয়াছ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহজাহান ওমরের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা স্বেচ্ছায় বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বাশার (বাদশা) বলেন, ‘বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারীদের জন্য আমাদের দরজা খোলা আছে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা দলের পদধারী কেউ নন। দলে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়।
এদিকে শাহজাহান ওমরের সঙ্গে অবস্থান নেওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হেমায়েত হোসেন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মো. সামছুল আলমকে বহিষ্কার করেছে জেলা বিএনপি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। তাঁকে গত ৪ নভেম্বর রাতে আটক করে পুলিশ। পরদিন বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় ২৯ নভেম্বর তিনি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান। সেদিন সন্ধ্যার পরই কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। পরদিন বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন শাহজাহান ওমর। এরপর ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন।